জীবনানন্দ দাশের জীবনী

আধুনিক কালে বাংলার শ্যামল স্নিগ্ধ নরম মাটিতে জন্ম নিলেন সর্বকালের সবদেশের উজ্জ্বল বিষয়ে তার নাম রবীন্দ্রনাথ। আকাশের মতোই তিনি বিরাট ব্যাপক নদীর মতো তিনি গভীর অনন্ত। নিঃসন্দেহে তিনি বরেন্য কবি। তার প্রতিবাদ স্বরূপ নির্ণয় অনেক সময় আমাদের অনুভব এর বাইরে। কিন্তু সূর্যকে অস্বীকার করবে কে? সেইতো সকল প্রাণস্পন্দনের উৎস।

জীবনানন্দ দাশ জীবনী

আমাদের আধুনিক জীবন তো সেই মহদ প্রতিভার স্পর্শেই উজ্জ্বল। বাংলার কবিতা এক নতুন ঢেউ উঠলো।সবাই শুনল নতুন এক কণ্ঠস্বর। বিস্ময়ের সীমা রইল না। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটা ক্লান্ত প্রাণ এক কবি। চোখে তার শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই কবি ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠল সকলের একান্ত প্রিয়। সেই কবির নাম জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্র যুগের এক ব্যতিক্রমী কবি।

জীবনানন্দ দাশের জন্ম ও বংশ পরিচয়

কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯  18 ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কবির পিতা  সত্যানন্দ দাশ ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন খ্যাতনামা মহিলা কবি। কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা পান মায়ের কাছ থেকে।

 জীবনানন্দ দাশের শিক্ষা

বাড়িতে মায়ের কাছেই পড়াশোনা শুরু করেন। পরে তিনি বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন ও আই.এ পরীক্ষায় পাশ করেন।  তারপর তিনি চলে আসেন কলকাতায়।১৯১৯  খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তিনি ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ পাস করেন।

এরপর ১৯২১  খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম.এ পাস করেন। এরপর তিনি আইন কলেজে ভর্তি হন।  কিন্তু আইন পড়ার হয়ে ওঠেনি।

 জীবনানন্দ দাশের কর্ম ও সাহিত্য জীবন

প্রথমে তিনি সিটি কলেজে অধ্যাপনার কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি খুলনা বাগেরহাট কলেজ, দিল্লির রামজস কলেজে অধ্যাপনা করেন।ইতিমধ্যে তিনি লাবণ্য প্রভা দেবী কে বিয়ে করেন এবং দারুণ অর্থ সংকটে পড়েন। যার জন্য কবিকে শিক্ষকতা এমনকি জীবন বীমার দালালি ব্যবসা করতে হয়।

কিন্তু বেশিদিন কবি বেকার থাকতে হয়নি। পরে আবার তিনি ব্রজমোহন কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং হাওড়া গার্লস কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি হাওড়া গার্লস কলেজে অধ্যাপনা করতেন।

 অর্থনৈতিক সংকট ও বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকেই তিনি অসংখ্য কাব্য কবিতা রচনা করে গেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘ সাতটি তারার তিমির’, ‘ রূপসী বাংলা’, ‘ বেলা- অবেলা- কালবেলা’।  তিনি ‘ বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ জন্যর ১৯৫২  খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার পান।  কাব্যগ্রন্থ কবিতার ছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটা উপন্যাস ও ছোটগল্প রচনা করেন।

 জীবনানন্দ দাশ গতানুগতিক প্রবাহের কবি নন। ‘ সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি,  তিনি সেই বিরল কবিদের একজন। যথার্থই  তিনি দ্বন্দ্ব, কর্কশ পরিবেশকে সম্পূর্ণ বর্জন করে নিজের সৌন্দর্য ধ্যানমগ্ন আত্মার গভীর আশ্রয় নিয়েছেন। তার ভাষা রীতি ছিল বিশিষ্ট।

স্বাতন্ত্র্য শব্দ ব্যবহারে নিজস্বতা আমাদের অভিভূত করে। প্রতীক ও বিকল্প ব্যবহারে তিনি অনন্য। প্রসন্ন বেদনার কোমল উজ্জ্বল বড়ই নতুন এবং নিজস্ব তার লেখা। বাংলা কাব্যের কোথাও তার তুলনা পাওয়া যায় না। জীবনানন্দ দাশের প্রথম ও প্রধান পরিচয় তিনি কবি।

 ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪  কলকাতার ট্রাম দুর্ঘটনা হয়। অবশেষে দুর্ঘটনার পর অর্থাৎ ২২অক্টোবর কবির জীবন প্রদীপ নিভে যায়, পড়ে থাকে শুধু স্মৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *