বিদ্যাসাগর সেতুর রচনা

কলকাতায় গঙ্গার উপর তৈরি দ্বিতীয় হুগলী সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু কলকাতা ও হাওড়া এই দুই শহরকে যুক্ত করেছে।  কলকাতার গঙ্গার উপর নির্মিত প্রথম সেতুর নাম রবীন্দ্র সেতু। এটি সাধারণ মানুষের কাছে হাওড়া ব্রিজ নামেই পরিচিত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের নামে এটির নামকরণ করা হয় রবীন্দ্র সেতু। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ গঙ্গার এপার ওপার যাতায়াত করেন।

ক্রমাগত জনসংখ্যা ও যানবাহন বৃদ্ধির তরুণ গঙ্গার উপর থেকে এপার কলকাতা আসার সমস্যা জটিল হচ্ছিল। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দ্বিতীয় হুগলি সেতু অর্থাৎ বিদ্যাসাগর সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিদ্যাসাগর সেতু
বিদ্যাসাগর সেতু

সেতু নির্মাণ ও নামকরণ

১৯৭২  খ্রিস্টাব্দের ২০শে মে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু নানা কারণে ও নানা অসুবিধার জন্য ঠিক সময় কাজ শেষ হয়নি। অবশেষে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ১০ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও উদ্বোধন করেন। তখন এর নামকরণ হয় বিদ্যাসাগর সেতু। 

বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পর দুশো বছর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই এই সেতুর নামকরণ করা হয়েছে বিদ্যাসাগর সেতু। বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথ এই দুই মনীষী কর্মসূত্রে কলকাতার সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। কলকাতা এদের পবিত্র স্মৃতিতে ধন্য। পশ্চিমবঙ্গের মাত্র ৩৬ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে এই সেতুর শিলান্যাস হয়। কিন্তু কুড়ি বছরের তা শেষ লেগেছে ৩৮৮ কোটি। বিদ্যাসাগর সেতু এখন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের গর্ব।

সেতুর বিবরণ

বিদ্যাসাগর সেতুটি আমাদের দেশের দক্ষ কারিগররাই তৈরি করেছেন।  এটি একটি ঝুলন্ত সেতু।  লোহার তারের দড়ি সেতুটিকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখেছে। দুটির মোট দৈর্ঘ্য ৮২৪ মিটার। ৪৫৭মিটার লম্বা কতগুলি রড ধরে রেখেছে। সেতুর মাঝে গাড়ি চলাচলের জন্য ১০.৯ মিটার ও পায়ে হাঁটার জন্য দুপাশের ২.৫ মিটার পথ নির্দিষ্ট আছে। মাথার উপর বাংলায় লেখা বিদ্যাসাগর সেতু।  আকাশছোঁয়ার চারটি বিশালি স্তম্বের সাথে অনুষ্ঠি করে কেবল সেতুটিকে ধরে রেখেছে। 

সেতুর ভার রক্ষা করছে যে চারটি বিশাল স্তম্ভ তাদের প্রত্যেকটার উচ্চতা ১০৩ মিটারের কিছু বেশি। সেতুর পাটা তো লোহার কংক্রিট দিয়ে তৈরি। সেতুর উপর দিয়ে দুই দিক থেকে তিন শাড়ি করে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা আছে।  সেতুর ওপর দিয়ে পার হবার সময় গাড়ি সম্পর্ক বিস্তৃত খবর রাখার জন্য আছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। এটি কেবল স্টেড ব্রিজ বা দড়ি নির্ভর সেতু। এই সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করার জন্য প্রত্যেক গাড়িকে চুঙ্গি করে দিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে দুই চাকা বাহনের আর চুঙ্গি কর (Toll Tax) লাগেনা যেমন মোটরবাইক।

উপসংহার

এই সেতুটি কলকাতার গর্ব।  এটি দেখতেও বেশ চমৎকার।  সন্ধার পর শত শত আলোর সমারোহে তার রূপ যেন আরো বেশি ফুটে ওঠে।  মনে হয় যেন কোন কল্পজগতের ছবি থেকে দৃশ্যটা তুলে আনা হয়েছে। এই সেতু এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।

মেট্রোরেলের রচনা

১. হুগলি সেতুর অপর নাম কি?

হুগলি সেতুর ওপর নাম হল বিদ্যাসাগর সেতু।

২. দ্বিতীয় হুগলি সেতু কবে তৈরি হয়?

এই সেতুর কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং শেষ হয় ১৯৯২ সালে।

৩. ভারতের বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু কোনটি?

ভারতের বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু হল দ্বিতীয় হুগলি সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতু।