সত্যজিৎ রায় জীবনী বাংলা রচনা

সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ পুরুষ। বাংলা চলচ্চিত্রের বয়স যখন তিন দশক অতিক্রম করেনি। কৈশোরের আরষ্টতা তখনও তার সর্বাঙ্গে। সেই অবস্থায় পঞ্চাশের দশকের মধ্যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মুক্তিদাতা সত্যজিৎ রায়ের “পথের পাঁচালী” নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে চলচ্চিত্রের রুদ্ধধার খুলে গেল। জাদু মন্ত্রের মতো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো একটি নাম সত্যজিৎ রায়।


সত্যজিৎ রায় জন্ম ও বংশ পরিচয়


১৯২১  উত্তর কলকাতায় বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারে পরিবারে জন্ম নিলেন মানিক সত্যজিৎ। পিতা সুকুমার রায়, বাংলা শিশুসাহিত্যের এক স্মরণীয় নাম। পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বাংলা শিশুসাহিত্যের প্রাণপুরুষ। মাতা সুপ্রভা রায়। হস্তশিল্পের পারদর্শিতা।

সত্যজিতের আড়াই বছর বয়সে তাঁর অকাল মৃত্যু হয়। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই পরিবারের অবদান অসামান্য। এমনই এক সৃজনশীলতার ঘরে জন্ম। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি এই প্রতিভা পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিভা থাকলেই হয় না। তাকে সার্থক করে তোলার জন্য প্রয়োজন সাধনার। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তিনি সত্যকে জয় করতে পেরেছিলেন।


 সত্যজিৎ রায় বাল্যকাল ও শিক্ষা


সত্যজিতের তখন দু বছর বয়স। ১৯২৬  খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে গড়পার বাড়ি থেকে সত্যজিৎ রায় চলে যান বকুল বাগানের বাড়িতে। বাড়িটা ছিল তাঁর ছোট মামার পি কে দাসের। শুরু হলো এক নতুন জীবন।১৯৩৪  সালে বকুলবাগানের বাড়িও ছারলেন। উঠলেন বেলতলা রোডে।

এরপর তিনি বালিগঞ্জ গভমেন্ট হাই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হবেন। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এরমধ্যে মার সঙ্গে ১৯২৮ সালে শান্তিনিকেতন গিয়েছিলেন। প্রথম দেখলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। শিক্ষাক্রম সত্যজিৎকে শান্তিনিকেতন ছাড়লেন এবং ফিরে এলেন কলকাতায়।


সত্যজিৎ রায় কর্মজীবন ও কৃতিত্ব


কর্মজীবনের প্রথম সত্যজিৎ রায় একটি বাণিজ্যিক সংস্থা কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে যোগ দেন। তারপর চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি পুরোপুরি চলচ্চিত্রে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর তিনি বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র করেন। পথের পাঁচালী চলচ্চিত্র জগতে আলোড়ন তুলল।

 এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে  অপরাজিতা, জলসাঘর, আগন্তুক, গুপী গাইন বাঘা বাইন, সোনার কেল্লা, সহ প্রায় সাতাশ টি ছবির চলচ্চিত্রায়ন করেন। এই ছবির জন্য সত্যজিৎ রায় পেয়েছেন দেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার। ১৯৯২ অস্কার পুরস্কার পান এবং ভারত সরকার তাকে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করেন।

 শুধু চলচ্চিত্রে কিশোরসাহিত্য সত্যজিৎ রায় ছিলেন সমান পারদর্শী। প্রফেসর শঙ্কু ও ফেলুদা সিরিজ তার প্রতিভার পরিচয়। শিশু সাহিত্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে সাহিত্যপ্রতিভার পুরস্কার এবং ভারত সরকার তাকে দেশিকোত্তম উপাধিতে ভূষিত করেন। এছাড়াও তিনি বইয়ের মলাটের ও ভেতরের চিত্র অঙ্কন করতে।

 এই বিস্ময়কর প্রতিভা ১৯৯২ সালে ২৩ এপ্রিল দীর্ঘদিন রোগভোগের পর কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোম এর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  তিনি আধুনিক ভারতের নবতীর্থ ভূমি। এই তীর্থভূমিতে পাওয়া যাবে হারানো সৌন্দর্য্যকে।