গ্রাম পঞ্চায়েত রচনা

প্রশাসনে বা শাসনকার্য ‘গণ’ অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার নীতি থেকে গণতন্ত্রের উৎপত্তি। আর সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ও কিছু কিছু প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব দেওয়ার উদ্দেশ্য বর্তমান পঞ্চায়েত রাজ্যর এর উদ্ভব হয়।  প্রকৃতপক্ষে পঞ্চায়েত হলে সেই জাতীয় শাসন পদ্ধতি যেখানে পাঁচজনের শাসন অর্থাৎ গনতান্ত্রিক শাসন স্বীকৃতি পায়। 

পরাধীন দেশের স্বায়ত্তশাসন পরাধীন ভারতবর্ষে স্বায়াত্ত শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়েছিল। ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত। সাধারণ মানুষ ছিলেন প্রশাসন থেকে অনেক দূরে। ছিল তখন জেলা বোর্ড, লোকাল বোর্ড, ইউনিয়ন বোর্ড। গান্ধীজী চেয়েছিলেন ছিলেন সেই অবস্থার বদল ঘটাতে। মর্মে মর্মে তিনি অনুভব করেছিলেন গ্রাম ভারতের মধ্যে নিহিত রয়েছে ভারতের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন।

বর্তমান পঞ্চায়েত ব্যবস্থা

পঞ্চায়েত কথার অর্থ বিচার সভা । সামন্তপ্রভুরা যখন দেশ শাসন করত তখন তাদের মনোনীত প্রতিনিধির হাতেই গ্রামের শাসন ব্যবস্থা থাকত। তার বিচার সবাইকে মেনে নিতে হতো। ইংরেজ শাসনের সময় ইংরেজদের প্রতিনিধি ছিল গ্রামের মোড়ল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন বোর্ড গড়ে তোলা হলেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ব্যবস্থা কার্যকর হলো না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রতিনিধি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, তা বাস্তবে রূপায়িত হলো না। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের ইউনিয়ন গড়ে উঠেছিল, তা গ্রামের ও গ্রামের মানুষের কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে থেকে নতুন পঞ্চায়েত শাসনব্যবস্থা চালু হয়। এখন প্রতি পাঁচ বছর অন্তর গ্রামের মানুষেরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। নতুন আইনে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ত্রিস্তরীয়। পঞ্চায়েত ব্যবস্থা হল – (ক) গ্রাম পঞ্চায়েত (খ) পঞ্চায়েত সমিতি (গ) জেলা পরিষদ। প্রত্যেকে স্তরে আলাদা আলাদা নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রতিনিধিত্ব করেন। একটা অঞ্চলে একটা পঞ্চায়েত সমিতি গঠিত হয়। অঞ্চল পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে থাকা কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা তাদের পর্যালোচনার জন্য বছর অন্তত দুবার মিলিত হন।

পঞ্চায়েত ব্যর্থতার অভিযোগ

পাঁচ বছরের মেয়েদের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের পরপর যেগুলি নির্বাচন হয়ে গেল তাতে দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েতের ব্যর্থতার পরিমাণও কম নয়। রাজনৈতিক দলভিত্তিক নির্বাচনের ব্যবস্থা হওয়া পঞ্চায়েত গুলির মধ্যে দলীয় কোন্দল বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে নানা সংঘাত-সংঘর্ষ বিভিন্ন হাঙ্গামা নৈমিত্তিক ঘটনা হয়েছিল। এছাড়া বিভিন্ন দুর্নীতির কার্যে অদক্ষতা ও দলবাজি অভিযোগের প্রায়শই পঞ্চায়েতগুলির বিরুধীতা করা হছে। বর্তমানে কোটি কোটি টাকার পি.এল.এ কেলেঙ্কারী সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছে।

উপসংহার : পঞ্চায়েত গণতান্ত্রিক ভারতের মূল, রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পাঠশালা, যা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জীবনে এনেছে মুক্তির স্বাদ,সঞ্চারিত করেছে নতুন বোধ , মঞ্জুরিত হচ্ছে আশা-আকাঙ্খা রক্তকরবী, কেন্দ্রীয় সরকার আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছেন। বর্তমানে আর্থসামাজিক কাটানো সম্ভব না হলে ভবিষ্যতে হয়তো গ্রামবাংলার মানুষের কোন তাৎপর্য পাবে। “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে”।