মানুষের বাসযোগ্য পরিবেশ এখন আর ভালো নেই। দূষণ ভারে জর্জরিত। যে জলের অপর নাম জীবন তা আজ সুপ্রিয় নয় যে বায়ু বুক ভরে টেনে নিয়ে মানুষ হস্তী পেতে চায় তাও ক্রমশ দূষিত প্রাণঘাতী হয়েছে।
যে মৃত্তিকা জন্য স্পর্শে ওখানে আমরা হই লালিত-পালিত সঞ্জীবনী শক্তিতে এই প্রাণটাও নানা রাসায়নিক পদার্থের যোগে দূষিত। জগত শব্দময় আবার শব্দব্রহ্ম। দুঃখের বিষয় প্রযুক্তি বিজ্ঞানের কৃপায় শব্দব্রহ্ম হয়ে উঠেছে মানুষের স্বাভাবিক সীমাকে অতিক্রম করে মরার কারণ যাকে নামান্তরে বলা হয় শব্দ দূষণ।
শব্দ দূষণ কি?
চোখ বন্ধ করে আমরা যদি কান খোলা রাখি তাহলে আমাদের কানে পৌঁছায় কোন না কোন শব্দ। যদি গভীর নিশুতি রাত হয় তবু। অর্থাৎ পৃথিবীর গান কখনো স্তব্ধ হয়না। পৃথিবীর গতির চিত্র কতইনা হৃদয় জুড়ানো আরামপ্রদ।
কিন্তু সেই শব্দ কিছু অপরিণত বুদ্ধি কাণ্ডজ্ঞানহীন মানুষের যন্ত্র শক্তির দ্বারা অস্বাভাবিক ভীত হয়ে মানুষের সহ্য সীমা কে টপকে যদি তার রাতের ঘুম কেড়ে নেয় তার অসুস্থ শরীরে কষ্ট ও যন্ত্রণা কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার নিশ্চিন্ত ভাবনা-চিন্তার প্রতিবন্ধক হয় লেখাপড়ার ক্ষতির কারণ হয় একটি শিশুর অপরিণত চেতনার ওপর আঘাত হেনে তাকে মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
তাহলে ঐ উচ্চগ্রাম শব্দ ঝংকার কিংবা অহংকার আর আস্ফালন নিশ্চয়ই ও স্বাস্থ্যকর অবস্থার পরিচায়ক নয়। উচ্চগ্রাম শব্দ এভাবে পরিবেশকে দূষিত করে একেই বলা হয়েছে শব্দ দূষণ।
শব্দ দূষণ সম্পর্কে কলকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশ
উচ্চগ্রামে বাজি ফাটানো, মাইক্রোফোন ও লাউড স্পিকারের উচ্চনিনাদ তোলা, উচ্চ ধ্বনিতে গাড়ির হর্ন বাজানো ইত্যাদি। উচ্চশব্দে হাত থেকে পশ্চিমবঙ্গবাসী কে পরিত্রান দেবার উদ্দেশ্যে কলকাতা হাইকোর্ট বেঞ্চ শব্দ দূষণের উপর 1996 এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। তাদের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন যেসব অধিকার ও মানুষের মৌলিক অধিকার। সুতরাং মনুষ্যকৃত শব্দের সীমা নির্ধারিত হওয়া বাঞ্চনীয়।
বায়ু দূষণ জল দূষণের সঙ্গে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয় তাহলো শব্দ দূষণ। নাগরিকের কল্যাণের দিকে তাকিয়ে রাজ্যের মহামান্য উচ্চ আদালতের শব্দ দূষণের উপর কয়েকটি বাধানিষেধ আরোপ করেন। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী বাজি নিষিদ্ধ হয়। মাইকের আওয়াজ বেঁধে দেওয়া হয়।
65 ডেসিবেল এর মধ্যে গাড়ির এয়ার হর্ন বাজানো বেআইনি বলে ঘোষিত হয়। এমনকি খোলা জায়গায় রাত্রি নটার পর সংগীত যাত্রা নাটক ইত্যাদি অনুষ্ঠানে উচ্চগ্রাম মাইকের আওয়াজ আইনবিরুদ্ধ বলে আদালত আদেশ জারি করেন।
মানুষ সচেতন না হলে আইন করে সবসময় দুষ্ট প্রবৃত্তিকে প্রতিরোধ করা যায় না। সরকারিভাবে স্বীকার না করা হলো শব্দ দূষণের প্রথম শহীদ হয়েছেন হুগলি জেলার পিয়ারাপুর দীপক দাস। কতিপয় সমাজবিরোধী দুষ্কৃতীরা প্রাণঘাতী বোমা বিস্ফোরণে উদ্যোগী হলেন দীপক দাস বাধা দেয় এবং সেই বোমা ছুড়ে দ্বীপ দাসের জীবন ছিনিয়ে নেয় ওই দুষ্কৃতীরা।
খবরে প্রকাশ বহুদিন পর শব্দ দূষণের প্রথম শহীদ দীপকের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার হয়নি। একটি যুবক প্রাণ দিয়ে শব্দ দূষণের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে রেখেছে।
আদালতের নির্দেশ অমান্য পরিনাম: শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে মহানগরী কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকে। অবশ্য আসার কথা, মহামান্য আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়ম ভঙ্গের জন্য 5 থেকে 50 হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে নির্দেশ আছে।
শব্দ দূষণ নির্মূল হোক এটাই কাম্য। সেজন্য গণমাধ্যমগুলো সহযোগিতায় পারে গনসচেতন গড়তে। জনগণ সচেতন হলে অপরাধীরা পিছু হটতে বাধ্য। সেই সঙ্গে সরকার প্রশাসন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসুন। সভা-সমাবেশ চেষ্টায় কিনা হতে পারে।