বনসম্পদের গুরুত্ব

সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকেই বনভূমির অস্তিত্ব।যখন  বিশ্ব চরাচরে কোন প্রাণী ছিলনা তখন চারদিকে ছিল শুধু সমুন্নত বৃক্ষ সমূহ। তারপর মানব সৃষ্টির পর বনভূমি হলো মানুষের আশ্রয়। হাজার হাজার বছর ধরে চলল বৃক্ষ ও মানুষের সহবস্থান। তারপর আধুনিক সভ্যতার পতন হলো উঠল বড় বড় প্রাসাদ, তৈরি হলো রাজপথ, বনাঞ্চল উচ্ছেদ করে তৈরি করা হলো নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বিলাসবহুল আসবাবপত্র।

এইভাবে সারা পৃথিবীতে বনভূমির সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে বর্তমানে তা প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বনভূমি উচ্ছেদের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তা করে পৃথিবীর সকল দেশেই এখন বনভূমি সংরক্ষণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে।


আধুনিক সভ্যতার প্রয়োজন


মানস বনভূমি উচ্ছেদ করে আধুনিক সভ্যতার পত্তন করেছে। আদিম গাছপালা ধ্বংসলীলার ওপর গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী ইমারত। সেই নির্মম ধ্বংসশালী আজও অব্যাহত। আজ মানুষ নিজেদের প্রয়োজন নির্মমভাবে বৃক্ষছেদন করে চলেছে।

যান্ত্রিক অস্ত্রাঘাতে বিশাল বিশাল বিক্ষোভ মাটির উপর লুটিয়ে পড়েছে। করাত দিয়েছিলে সেগুলো দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের জিনিস। বনভূমির উচ্ছেদের ফলে আবহাওয়া ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে প্রচন্ড খরা বাত্সরিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে।


প্রাচীন ভারতের বনসম্পদ


ভারতবর্ষে একদা ছিল বনভূমিতে সমৃদ্ধ। ভারতের বিখ্যাত জনপদ গুলির শ্যাম বনানী জীবনধারাকে নিবিড় শান্তিতে আচ্ছন্ন করে রাখত। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্রের মত যন্ত্র যুগের অনুপ্রবেশের ফলে মুনাফালোভী ঘাতকদের অস্ত্রাঘাতে অধিকাংশ বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন। যেখানে ছিল নিবিড় বনভূমি সেখানে দেখা যায় কলকারখানায় ধোয়া।

স্বাধীনতার পর অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে। কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রবেশ এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনভূমির ছিটেফোটাও অবশিষ্ট নেই। এছাড়া কল-কারখানা সম্প্রসারণ বেশিমাত্রায় ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বনভূমিতে আঘাত হানা হয়েছে।


বনসম্পদ উচ্ছেদের সমস্যা ও সমাধান


বনভূমির পরিমাণ ভয়ঙ্কর হতে পারে সে বিষয়ে সরকার সচেতন হয়েছেন। তারা এ বিষয়ে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন করে বনভূমি সংরক্ষিত করেছেন। এইসকল সংরক্ষিত বনভূমির বৃক্ষ ছেদন করলে বা জীবজন্তু হত্যা করলে কঠিন দন্ড ব্যবস্থা আছে।

রাজ্য সরকার বনদপ্তর রাজ্যের বনভূমি সংরক্ষণের কতগুলি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিটি বৃক্ষের চিহ্নিত করো। রক্ষণাবেক্ষণ এবং নতুন নতুন বৃক্ষরোপণ এইসকল বনের বৃক্ষরাশি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলি পাহারা দেবার জন্য যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে কিভাবে? বিক্ষোভকারীরা লুকিয়ে-চুরিয়ে প্রত্যেহ উচ্ছেদ করে চলেছে। আদিবাসীরা অনেক সময় বৃক্ষছেদন করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

উপসংহার: বনভূমি সংরক্ষণ যে এখন ঠিক মতো হচ্ছে না তা খবরের কাগজ পড়লে জানা যায়। শিকারি প্রতিদিনকার কাঠ চুরি করছে। এখন প্রয়োজন যথার্থ বৃক্ষ প্রেমিকের। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বনভূমি সংরক্ষণের জন্য গঠিত হয়েছে বন সংরক্ষণ সমিতি যাদের কাজ হলো মানুষের মধ্যে বৃক্ষ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে চেতনা জাগানো।

তাদের যেমন নিত্যনতুন বৃক্ষরোপণ কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে তেমনি বৃক্ষ গুলি যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষিত হয় সেদিকেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। সাধারণত দেখা যায় সরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয় না। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক হতে হবে। মনে রাখতে হবে একটি গাছ পরিবেশনে বিরাট এক সহায়ক হতে পারে।

‘ একটি গাছ একটি প্রাণ’ –  এই শ্লোগান নিয়ে বনসম্পদ সংরক্ষণে তৎপর হতে হবে। 

Leave a Comment