হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর আবির্ভাব আমাদের কাছে বিস্ময়কর ঘটনা। তিনি ছিলেন প্রকৃত ধর্ম পরায়ন দানবীর। ঈশ্বরের প্রতি ছিল তাঁর শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও ভক্তি।
জন্ম ও বংশ পরিচয়: ১৭৩২ খ্রিস্টাব্দের হুগলি শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মুহাম্মদ মহসিন এর জন্ম হয়। তার পিতার নাম ফৈজুল্লা। তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। 3 ব্যবসায়ী আগা মোতা হরের বিধবা পত্নী কে বিবাহ করে। মহসিন তাদেরই সন্তান।
শিক্ষা : মুর্শিদাবাদে থেকে আরবি ও ফারসি ভাষা শিক্ষা করেন। ইংরেজি উর্দু ও তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। তিনি অল্প দিনে চেষ্টায় কোরআন মুখস্ত করে। সংস্কৃত ভাষাতে তিনি ছিলেন পারদর্শী। মক্কা মদিনায় গিয়ে তিনি করেছিলেন বলে তার উপাধি হয় “হাজী”। সঙ্গীতেও ছিল তার প্রবল অনুরাগ।
কর্মজীবন ও কৃতিত্ব: প্রবল অনুরাগ জন্মানোর জন্য তিনি তীর্থ ভ্রমণে বের হন। তিনি আরব, পারস্য, মিশর, তুরস্ক এবং ভারতের স্থান ভ্রমণ করেন। উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার সম্পত্তির মালিক মহসিন। ভগিনী মুন্নাজান ও ভগিনীপতি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যাওয়ার তাদের বিপুল সম্পত্তির মালিক হন মহসিন। কিন্তু তিনি এত টাকা কী করবে? প্রথমত তিনি ছিলেন অবিবাহিতা, দ্বিতীয়ত তিনি ফকিরের মতো জীবন যাপন করতেন। তখন তিনি তার সব টাকা গরীব-দুঃখীকে দান করতে লাগলেন। শিক্ষাখাতে তিনি প্রচুর অর্থ দান করে গেছেন। হুগলিতে তিনি একটি প্রকাণ্ড মসজিদ নির্মাণ করে। এই মসজিদ হলো হুগলির বিখ্যাত ইমামবাড়া। মুসলমান ছাত্রদের শিক্ষার জন্য তিনি প্রচুর অর্থ দান করে গেছেন। আজও বহু দুষ্ট মুসলমান ছাত্র ফান্ড থেকে সাহায্য পেয়ে পড়াশোনা করে থাকে। দুস্থ মানুষের সেবার জন্য তিনি ‘ইমামবাড়া’ হাসপাতাল তৈরি করে।
নিষ্ঠাবান, ধর্মপ্রাণ, দানবীর, ত্যাগী, দীর্ঘজীবী এই মহানব্যক্তি ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী