ভূমিকা: আর সকলের মত সুনীল কথা রাখলেন না তাই বাঙালি পাঠকের মনে বর্ণময় আশা জাগিয়েও সে আশা পূর্ণ না করে বহু অসমাপ্ত কাজ রেখে মহাপুজার মহা অষ্টমীর দিনে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন দুই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় কবি ও সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।মহাসিন্ধুর অপার থেকে জীবনদেবতার অঙ্গনে তার আত্মা ইহলোকের মায়া কাটিয়ে অমৃতলোকে গমন করল। আমাদের জন্য রইল তার বিশাল সৃষ্টিসম্ভার। আর ঠিক সেই জন্যই তার সৃষ্টির মধ্যে অনন্তকাল ধরে অমর হয়ে থাকবেন স্রষ্টা সুনীল। আমরা তাকে স্মরণ করব আমাদের স্বার্থে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ব্যক্তিজীবন
ব্যক্তিজীবন – সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর থেকে ব্যক্তি সুনীলকে আলাদা করা খুব কঠিন। কারণ তার জীবনের সঙ্গে কবিতাও গদ্য রচনা সম্ভার মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিল। 78 বছর বয়সে স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রকে রেখে অগণিত বাঙালি সাহিত্যপ্রেমী মানুষকে চির বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন বাঙালির বড় কাছের মানুষ।১৯৫০ সালে মাত্র 16 বছর বয়সে ‘দেশ’ পত্রিকায় তার চিঠি “একটি নামের কবিতাটি” প্রকাশিত হয়। তারপর ‘কৃত্তিবাস’ নামে এক সাময়িক পত্রিকা প্রকাশের সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আর্থিক সমস্যার কারণে খুব কম বয়সেই তাকে অর্থ রোজগারের পথে নামতে হয় কয়েকটি ছোটখাটো চাকরি করার পর ১৯৭০ সাল থেকে স্থায়ীভাবে আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করতে শুরু করে। এইসব সাংসারিক টানাপড়েন তার সাহিত্য চর্চা চালিয়ে গেছেন এবং একটি একটি করে সাফল্যের সোপান বেয়ে উপরে উঠেছেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবি জীবন
সাহিত্যিক না না দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাবলীল বিচরণ করলেও তিনি নিজেও কবিতাকে বেশি ভালবাসতেন এবং তিনি সুনীল সম্ভবত বাঙালি পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। জীবন অনুভূতি বাঙালি পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন জীবনের নানা দিক ও নানা অনুভূতি নিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন তার কিছু নিয়ে পাঠকসমাজে তৈরি হয়েছে কিছু বিতর্ক । সমালোচনা হয়েছে তার অনেক লেখা নিয়ে তথাপি সবকিছুই থেমে গেছে সব ধুয়ে নিয়ে গেছে সুনীল সাগরের ঢেউ। তার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ ছিল “একা এবং কয়েকজন”। আপন মানুষ ভাবনাকে অকপটে প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়ে। তার কবিতা বাঙালি পুরুষকে প্রেমে আত্মবিশ্বাসী হতে শিখিয়েছে।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য জীবন
স্থায়িত্ব ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দ্বিতীয় প্রেম তবুও তিনি অবহেলা করে পরকীয়া রূপ দেননি খোলামেলা ভাবে প্রকাশ করেছেন বাংলা সাহিত্যের আঙিনাতে সুনীলের সাহিত্য সৃষ্টির সময় ছিল ৫৯ বছর আর এই সময়ের মধ্যে তিনি মোট ২৫০টি বই রচনা করেন। কবিতা, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ সাহিত্য,, নাটক চিত্রনাট্যের, শিশুসাহিত্য- সাহিত্যে সাবলীলভাবে বিচরণ করেছেন সুনীল। সাহিত্য জগতের সঙ্গে ছিলেন খোলামেলা এক তরতাজা মন। তার প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৬ তার বহু উপন্যাস তাকে খ্যাতিমান দিয়েছে অনেক। তার লেখা গল্প নিয়ে বাংলা নামে পরিচালকেরা ছবি করেছেন তার নিজস্ব লেখা চিত্রনাট্য ‘শোধ’ জাতীয় পুরস্কার পায়। জীবনে সাহিত্যচর্চা করে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি কিন্তু সবথেকে বড় পুরস্কার ছিল অগণিত পাঠকের ভালোবাসা।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণ
বামপন্থী মতাদর্শ সাহিত্যিক বলে প্রচারিত সুনীল কিছুটা ব্রাত্য ছিলেন বাংলা নবগঠিত সরকার পরিচালকদের কাছে এবং তার জন্য একসময় শিশু কিশোর আকাদেমি সভাপতি পদ থেকে তাকে চলে যেতে হয়েছিল। সম্ভবত সেই কারণেই তার প্রাণের ২৪ ঘন্টার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে খোদ মুখ্যমন্ত্রী সক্রিয়ভাবে সুনীলের সাথে ব্যাপারে উদ্যোগী হন। তবে এই মহান সাহিত্যিক এবং বিশিষ্ট মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। আর সবার চোখে জল ঝরিয়ে চলে গেলে নীললোহিত।
উপসংহার – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একাধারে কবি ও সাহিত্যিক। তার লেখা নিয়ে বহু সমালোচনা বিতর্ক হয়েছে কিন্তু সেই বিষয়ে তিনি নিজের বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তিনি একের পর এক সৃষ্টি করেছে। তাই এইরকম একজন থাকে অবশ্য একটু আলাদা। আমরা বাঙালি পাঠক তার কাছ থেকে যা পেয়েছি তাতেই মাথা তুলে নিয়ে আত্মোপলব্ধির চেষ্টা করছি তার অচেনার মধ্যে দিয়ে আর তাতেই আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। এটাই তো সব নয় কি?