২০১২ সালের ২২ জুলাই ভারতের ত্রয়দেশ রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হলেন বাংলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে প্রণব মুখোপাধ্যায়। বাংলা তথা ভারতবাসীর কাছে এই মানুষটি দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচিত তবুও বাঙালি হিসেবে ভাবতে ভালো লাগে বহু পথ অতিক্রম করে জাতীয় রাজনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ ও যোগ্য মানুষটি তার প্রকৃত প্রাপ্য সম্মান লাভ করলেন ভারতের শাসনব্যবস্থা সর্বোচ্চ পদাধিকারী রাষ্ট্রপতি হয়ে। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই পদাধিকার সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিলো যে ভারতে গণতন্ত্র কত সফল ভাবে প্রতিষ্ঠিত তাই এক অচেনা গ্রামের ছেলে ও আপন যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে জনমনে আসন লাভ করে ভারতের প্রথম নাগরিক হবার দুর্লভ সম্মান লাভ করলেন।
প্রণব মুখোপাধ্যায় শৈশব ও শিক্ষা
বীরভূমের কীর্নাহার থেকে মাইল দুয়েক দুরে এক দরিদ্র গ্রাম মিরাটিতে ১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন আজকের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। গ্রাম থেকে অনেক দূরে উচ্চ বিদ্যালয় তাকে যেতে হতো অনেক কষ্ট করে কারণ তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ছিল না বললেই ঠিক, তবুও সেদিনের পল্টু পড়াশোনার আগ্রহ নিয়মিতভাবে অনেক কষ্ট করে স্কুল যেত। সেই গ্রামের সহজ সরল জীবন থেকে এক দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রাইসিনা হিল পৌঁছলেন সেদিনের পল্টু – আজকে প্রণব মুখোপাধ্যায় হয়ে। শিক্ষাগত দিক থেকে তিনি ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে এম.এ করেছেন আর তার সাথে এল.এল.বি -ও। কলকাতার ডাক বিভাগে কেরানি হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয় তারপর স্কুল ও কলেজে শিক্ষকতা আর তার সাথে সাংবাদিকতাও করেছেন।
রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও উত্তরণ
প্রণব মুখার্জি রাজনৈতিক জীবনের হাতে খড়ি অজয় মুখার্জি নেতৃত্ব বাংলা কংগ্রেস দলে। তারপর ১৯৬৯ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন এরপর সেই বছরের মেদিনীপুরের উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর সাফল্যের পিছনে তার ভূমিকা ইন্দ্রাগান্ধির মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তিনি প্রণব মুখার্জিকে রাজ্যসভার সদস্য করে নিয়ে আসেন। ইন্দিরা গান্ধির আস্থাভাজন প্রণববাবু পাঁচবার রাজ্যসভায় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এবং পরে দুইবার লোকসভায় প্রার্থী হিসাবে জয়লাভ করেন। এই দীর্ঘ সাংসদ জীবনে তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত যোগ্যতার দ্বারা। বাণিজ্য থেকে অর্থমন্ত্রক, বিদেশ থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপারসন, লোকসভার নেতা এইভাবে কংগ্রেসের হয়ে নানাভাবে তিনি দেশের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি পদের অভিষেক
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শাসক দলের প্রার্থী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায় তার বিরোধী প্রার্থী পি.এ সাংমাকে ৩ লক্ষ ৯৭ হাজার ৭৭৬ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই তাকে প্রথম শুভেচ্ছা বার্তা পাঠালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ জুলাই ২০১২ সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে বেলা ১১টার সময় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রণব মুখার্জি রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত করবার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করান। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী, লোকসভার অধ্যক্ষ মীরা কুমার, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও সোনিয়া গান্ধী, লোকসভার বিরোধী নেত্রী সুষমা স্বরাজ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও আরো অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় সাংসদ ও বিধায়কগন। রাষ্ট্রপতি পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পদ্ধতি তার ভাষণে যথার্থ রাষ্ট্রনায়েকের মত পৃথিবীর সামনে আপন বিশ্ব বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তুলে ধরলেন এই উপলক্ষে সংসদ ভবনের বাইরে ২১ বার তোপধ্বনি করে তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদের সর্বোচ্চ সম্মান জানালো রাষ্ট্র।
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি কে
উত্তর: ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।