ভূমিকা: সারা বিশ্বের মানুষ যাকে “king of Pop” নাম চেনেন, জীবিতকালে যিনি ছিলেন প্রবাদপ্রতিম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী, বহু পাশ্চাত্য সঙ্গীত শিল্পীর ‘আইডল’, তাঁর নাম হল মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন।সেই মানুষটি সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন পরলোকে মাত্র ৫০ বছর বয়সে। তার এই অকাল আকস্মিক মৃত্যু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তার গুণমুগ্ধ শ্রোতাদের হৃদয়কে হাহাকারে ভরে দিয়েছে।যাকে ঘিরে বহু স্বপ্ন দেখেছিলেন বহু শ্রোতা ও শুভানুধ্যায়ীরা। তারা সবাই যেন নির্বাক হয়ে গেলেন। মাটি-পৃথিবীর মানুষ হয়েও সুরের তরণীতে পেয়ে তিনি চেয়েছিলেন কল্পনার রোমান্টিক চাঁদের বুকে অবতরণ করতে।
বাল্যকাল: জ্যাকসনের জন্ম হয়েছিল ১৯৫৮ সালের ২৯ আগস্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানায়। বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান ছিলেন তিনি। বাবা হলেন জোসেফ ওয়াল্টার জো জাকসন এবং মায়ের নাম ক্যাথেরিন এসথার।মাইকেল জ্যাকসন বয়স যখন ছিলো মাত্র অবশ্য তখন তিনি তাঁর অন্যান্য ভাইদের সাথে মিলিত ভাবে একটি টাইমস হতে অংশগ্রহণ করেন এবং তার যৌথভাবে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। এই দলে জাকসন পরিবারের ৫ সন্তান অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা হলেন জ্যাকি, টিটো, jজার্মেইন, মারলো ও মাইকেল।পরবর্তী সময়ে এই পাঁচভাই মিলিতভাবে একটি গানের দোল খোলেন যার নাম ছিল ‘জ্যাকসন ফাইভ’। এইভাবে খুব কম বয়স থেকেই মাইকেল জ্যাকসন তাঁর স্বপ্নের সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন এবং প্রথম থেকেই তাঁর প্রতিভার পরিচয় দিয়ে প্রশংসা লাভ করেন।
শিল্পী জ্যাকসন: একক শিল্পী হিসাবে মাইকেলের জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৭১সালে এবং ১৯৭২ সালে তাঁর প্রথম একক গানের অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।তারপর বেশ কিছু বছর পর ১৯৮২ সালে জ্যাকসন একাই দশটি চার্টবাস্টার গানে মাতিয়ে দেন পপ দুনিয়াকে।এই অ্যালবামটি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিক্রি হয়েছিল ২১ মিলিয়ন এবং সারা বিশ্বে ২৭ মিলিয়ন কপি।একজন সঙ্গীত শিল্পীর অ্যালবাম বিক্রির এই রেকর্ড আজও সব শিল্পীর কাছেই অধরা রয়ে গেছে। আর এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় জনপ্রিয়তা জ্যাকসনের কাছে কিভাবে পৌছে গিয়েছিল পেশাদারী জীবনের প্রথম থেকেই।এরপর আরো যেসব অ্যালবাম বিভিন্ন সময়ে বেরিয়েছিল সেগুলি হল – ১৯৮৭ সালে ‘ব্যাড’, ১৯৯১ সালে ‘ডেঞ্জারাস’, ১৯৯৫ সালে ‘হিস্ট্রি’ এবং এর প্রত্যেকটি অ্যালবামই শ্রত্রিমহলে ব্যাপক উন্মদনার সৃষ্টি করে।প্রায় একটি প্রজন্মের সৃষ্টি হয় সঙ্গীটির দুনিয়ায়। আসলে মাইকেলের গায়কী এবং স্টেজ পারফরমেন্স ছিল এককথায় যুগান্তরকারী।
‘Black or White’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্রথম মার্কিন সমাজের বর্ণবিদ্বেশিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।তাঁর ‘রোবট’ ও ‘মুনওয়ক’ স্টাইলের ডান্স টেকনিক স্বরক্ষেপন এবং থিম নির্বাচন সারা বিশ্বের শুধু শ্রোতা নয় শিল্পীদের মধ্যেও সারা ফেলে দেয়।মানুষ এবং পরিবেশ,মূল্যবোধ অত্যাচারে জর্জরিত যে কোনো সমস্যা নিয়েই বারবার তিনি গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের সচকিত করেছেন।ভাবতে অবাক লাগে একজন পপ শিল্পী তার কন্ঠ দিয়ে কিভাবে মাতিয়ে দিলেন বিশ্বশ্রোতার হৃদয়।সিপ্পি জ্যাকসন জীবনে ১৩টি গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছেন, ১৯৮৪ সালে তাঁকে হলিউড ওয়াক অফ ফ্রামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া ‘The Jackson Five’ গোষ্ঠির সদস্য হিসাবে তাঁকে ১৯৯৭ সালে ‘Rock and Hall of Frame’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। song Writers Hall of Frame-এও তিনি স্থান পেয়েছিলেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় হল ৭৫০ মিলিয়নেরও বেশি যাঁর রেকর্ডের বিক্রি তিনিও জীবনের শেষে আর্থিক দেউলিয়া অবস্থায় পৌছে গিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন: ১৯৯৪ সালে আরেক বিখ্যাত পপ গায়ক এলভিস প্রেসলে একমাত্র কন্যা মারিকে বিবাহ করে মাইকেল জ্যাকসন কিন্তু ১৯৯৬ সালে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।এরপর জ্যাকসন আবার বিবাহ করেন এবং তাদের দুটি সন্তান হয়।কিন্তু এবারও তাদের বিবাহ স্থায়ী হয়নি ১৯৯৯ তাহলে আবার তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এমনই একজন বিশ্ব বিখ্যাত মানুষের জীবনটা কিন্তু আদৌ সুখের ছিল না। মৃত্যুর সময় ৫০ বছর বয়সে ১৫ টির বেশী প্লাস্টিক সার্জারি তেচ্ন ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি আয়্নার্স্কিক দেহের ওজন ছিল মাত্র ৫০ কেজি।অসংখ্য সুচের ক্ষতে জর্জরিত জ্যাকসন এর শারীরিক অবস্থা যে একেবারেই ভাল ছিল না একথা ঘনিষ্ঠমহলে সকলেই জানতে। কিন্তু কি অসুখ ছিল তারে কথা কিন্তু কেউ পরিষ্কার বলতে পারেন না। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা গেছে যে ত্বকের ক্যান্সার থেকে মুক্ত হলো প্রচুর পরিমাণে ট্যাবলেট খেতে তিনি ক্ষণস্থায়ী শারীরিক উদ্যম পাবার জন্য। চিকিৎসকদের মতে তিনি ছিলেন হাইলোকনদ্রিয়ক এবং বড় ধরনের হৃদরোগের তিনি মারা যান। অনেকের সন্দেহ প্রকাশ করে যে ওষুধ হিসেবে হার্টের পক্ষে ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত মাদক ব্যবহারের তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসে।
বিতর্কিত জ্যাকসন: সাধারণ ভাবে দেখা যায়নি সেলিব্রেটিরা একটু বিতর্কিত হয়ে থাকেন কিন্তু মাইকেল জ্যাকসন নিয়ে বিতর্ক টা একটু বেশি ছিল। বারবার তার জীবন চর্চার বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উঠেছে। শিশু নির্যাতনের দায় ১৯৯৩ সালে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। দুইবার বিবাহ সন্তানের পিতৃত্ব নিয়ে বিতর্কে বারবার পর্যুদস্ত হয়েছেন তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তার সংগীতের ক্যারিয়ার।২০০৫ সালে একশন মার্কিন জনগণের সাথে মামলায় জড়িয়ে পড়েন এবং তার ইমেজ তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত্যুর পর বিতর্কিত তার পেছন ছাড়িনি। কারণ আবার দেখা দিয়েছে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে এমনকি মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক। তবে এসবের কোন ছবি এখনও পাওয়া যায়নি।
দুই দুইবার রক সঙ্গীতের হল অফ কেসে নির্বাচিত হলেও সময় তাকে ছাড়েনি। মানসিক সমস্যা ছাড়াও আর্থিক কষ্ট তিনি ভুগছেন। আর সেই কারণে জীবনের শেষ লগ্নে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ১৩ জুলাই ২০০৯ থেকে লন্ডনে একটি কনসার্টে অংশ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বেঁচে থাকলে এই ধরনের পঞ্চাশটি করছে আগামী ২০১০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি ব্যস্ত থাকতেন। এর জন্য মহড়া দিতে শুরু করেছিলেন অসুস্থ পপস্টার।
উপসংহার: পপ সঙ্গীতের বিশ্বের sসূর্য মাইকেল জ্যাকসন মঞ্চে আবির্ভূত হতেন শত শত আলোর ঢেউ এর মধ্যে। মাতিয়ে দিতেন তাঁর গুনমুগ্ধ শ্রোতাদের হৃদয় অর্থ রোজগার করতেন বেহিসাবি ভাবে কিন্তু এত কিছু দিয়ে অর্থাৎ খ্যাত এই সাফল্য বৈভবে সব কিছুই মিলাতে ভাবে তার জীবনকে এক কিন্তু আলোকিত করতে পারেনি। তাই ক্রমশ তিনি শারীরিক ও মানসিক অবসাদের নেমে পড়েছিলেন। আর এভাবে একা তার গানের তরী ভাসিয়ে ছিলাম নয়ন জলে। তারপর এই মানুষটি গত ২৫ যুন ২০০৯ এর অপরাহ্ণে বাড়িতে হূদরোগে আক্রান্ত হন এবং প্যারামেডিক ফ্রাচার হৃদযন্ত্র সচল করতে ব্যর্থ হন। তাকে নেওয়া হয়েছিল UCLA মেডিক্যাল সেন্টারে কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। জীবনচরিত ততক্ষনে তিনি মৃত্যুর ঘাটে ভিডিও দিয়েছেন সেখান থেকে আর কোনভাবেই ফিরিয়ে আনা যাবে না। পড়ে রইল খেতেই পড়ে রইল সাফল্য রয়ে গেল ধন গৌরব।