আর্সেনিক দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা:  আর্সেনিক দূষণ পশ্চিমবঙ্গের এক মারাত্মক সমস্যা। এই সমস্যা কয়েকটি জেলায় সীমাবদ্ধ বলে এখনো সারা রাজ্যব্যাপী ভাবে প্রচারিত হয়নি। কিন্তু এই সমস্যা যে অচিরে সারা রাজ্যে ব্যাপক হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ একমত। আর্সেনিক দূষণ হয় জল বাহিত বিক্রিয়ায়। এই বিষক্রিয়ায় নানা ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি এবং বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।


আর্সেনিক দূষণ কি? 


আর্সেনিক জল এক ধরনের তীব্র মরণ বিষ। এই বিষ অতি সহজে মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে। মাটির নিচে আছে এই মারাত্মক বিষের স্তর। নলকূপের পানীয় জলের সঙ্গে এই বিষ উঠে আসে।মানুষ সেই নলকূপের জল পান করে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। সারা শরীরে দগদগে ঘা হয়ে যায়, শিশুরা হয়ে পড়ে বিকলাঙ্গ। শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের দূষণের ফলে বহু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে, হাজার হাজার নর-নারী দূষিত চর্ম রোগে ভুগছে। আর্সেনিক দূষণের ফলে বহুগ্রাম শ্মশান হয়ে গেছে।


পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় আর্সেনিক দূষণ


  ইদানিংকালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা  কয়েকটি জেলায় জল পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে এইসব জলে প্রচুর পরিমাণে আর্সেনিক রয়েছে। এদের মধ্যে নলকূপের জলই বেশি। পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মালদহে আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। সাম্প্রতিককালে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা অঞ্চলে জলে আর্সেনিকের বিক্রিয়া সম্বন্ধে বোঝাতে গ্রামে গ্রামে সাইকেল নিয়ে ঘুরছে। তাদের বক্তব্য তারা আর্সেনিকের শিকার। এতে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। প্রথমে তাদের কথা বিশ্বাস করতে চাইনি। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথায় তারা বিশ্বাস করে।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি:  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা মালদহ পরিদর্শন করে বিস্মিত হয়েছেন। তারা রোগীদের পরীক্ষা করে শুধু সরকারের ওপর নির্ভর না করে পানীয় জল ফুটিয়ে নিতে বলেছেন। তারা সরকারকে নানা সাহায্যের কথা বলেছেন।


আর্সেনিক দূষণের প্রতিকার


 আর্সেনিক দূষণের প্রতিকার হিসাবে বলা হয়েছে জল পরীক্ষা করে তবে পাশ করতে হবে।কিভাবে সেই পরীক্ষা? নলকূপের জলে একটু করে ফিটকিরি দিয়ে নাড়াচাড়া পড়ে সেই জল মিহি কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে। তবে এ ব্যবস্থাও সর্বাংশে নিরাপদ নয়। আর্সেনিক দূষণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধে। সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তরে ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের জেলা গুলোতে আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধের জন্য ১৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে।

 উপসংহার:  বর্তমান শুধু সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থ চেয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে মতামত জানতে চেয়েছেন। মতামত পেলে বিশ্বব্যাঙ্ক রাজ্য সরকারকে সাহায্য করবে।