ভগিনী নিবেদিতা জীবনী বাংলা রচনা

এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে অনেক মানুষ এসেছেন দেশ কে ভালোবেসেছে এবং এই দেশের ও দশের মঙ্গলের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা এখন আর বিদেশী বা বিদেশিনী নন। তারা হয়ে ওঠেন স্বদেশ আত্মার বাণী মূর্তি। এমনই একজন মহীয়সী মানবী নাম তার মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল।

ভগিনী নিবেদিত জীবনী বাংলা রচনা

আয়ারল্যান্ড তার  জন্মভূমি আর তার দ্বিতীয় জন্মভূমি এই ভারত বর্ষ এখানে তিনি ভগিনী নিবেদিতা নামে পরিচিত। তিনি ভারতের নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য। যারা এদেশে জন্ম গ্রহণ না করে ভারত ও ভারতবাসীকে আপন করে নিয়েছেন ভগিনী নিবেদিতা তাদের মধ্যে একজন।

ভগিনী নিবেদিতা জন্ম ও বংশ পরিচয়

১৮৬৭ সালে ২৮ অক্টোবর উত্তর আয়ারল্যান্ডের নিবেদিতা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল স্যামুয়েল রিচমন্ড এবং মাতার নাম মেরি ইসাবল নোবল। তার বাল্যকালের নাম ছিল মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। তিনি তার শিক্ষাজীবন শুরু করলেন হেলিক্যাল বিদ্যালয়।

নিবেদিতা সেন রিচমন্ড নোবেল ছিলেন মাতৃভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অগ্রণী সৈনিক। তাই দেশ প্রেম, কঠোর শ্রম, শ্রেণীর মানুষদের শিক্ষিত করে তোলার প্রচেষ্টা প্রভৃতি গুন নিবেদিতার চরিত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।

 ভগিনী নিবেদিতা ব্যক্তি জীবন

ছাত্র জীবন সম্পূর্ণ করে তিনি শিক্ষাদানের ব্রত গ্রহণ করেন এবং ইংল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এভাবে তিনি যখন নিজেকে সকলের মধ্যে বিলিয়ে দিতে শুরু করেছেন তখন তার পিতার মৃত্যু তাকে কিছুটা বিভ্রান্ত করে তোলে। কর্তব্যকর্মের উৎসাহদান ও মানসিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তখন তার একজন পথপ্রদর্শক গুরুর প্রয়োজন।

 বিবেকানন্দের সান্নিধ্যেও ভারতে আগমন

১৮৯৩  খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরে ধর্ম মহাসম্মেলন চলছে। সেখানে উপস্থিত হলেন ভারতের বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ। তার বক্তৃতায় আমেরিকার মানুষ মুগ্ধ হলো। তারপর তিনি পদার্পণ করলেন আয়ারল্যান্ডে। আর এখানেই প্রথম সাক্ষাতে নোবেল তার মনের মানুষ প্রাণের সন্ধান পেলেন।

তিনি বিবেকানন্দ শিষ্যা হলেন। মিস মার্গারেট এলিজাবেথ হলেন ভগিনী নিবেদিতা। মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে নিবেদিতা ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ২৮ জানুয়ারি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চলে এলেন। স্বামীজির কথা তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ভারতের বিভিন্ন সেবামূলক কাজ চালিয়ে যান। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের সারদা মায়ের এবং স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবাসী দারিদ্র দূরীকরণে নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করে দেন।

ভারতে নিবেদিতা কর্মসাধনা

ভারতের বিভিন্ন সেবামূলক কাজ চালিয়ে যান। মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলের কয়েকটি বালিকা নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি বালিকা বিদ্যালয়। প্রথাগত শিক্ষা দান ছাড়াও সেখানে তিনি ছাত্রীদের স্বাবলম্বী করে চলার অনুপ্রেরণা দিতেন। তিনি বিভিন্ন হাতের কাজ আলপনা ইত্যাদির শিক্ষা দিতেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান ছিল যথেষ্ট। তিনি বিপ্লবীদের নানাভাবে উৎসাহ দিতেন।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে লেখনি ধারণ ছিল তার কর্মজীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি ছিলেন বহু প্রতিভার অধিকারী। তিনি কয়েকটি বই লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় তিনি ছিলেন লোকমাতা। সারদা মাতা তাকে স্বেত্পদ্মা সম্মান দিয়েছিলেন। ১৯১১ সালে ১৩ অক্টোবর এই মহিয়সী নারীর মহাপ্রয়ান ঘটে।

আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে আমরা শিক্ষা-সংস্কৃতির পথে কতটা অগ্রসর হতে পেরেছি তা বিচার সাপেক্ষ। কিন্তু ভগিনী নিবেদিতাকে আমরা ভুলিনি। কোনদিন ভুলবো না। তার স্মৃতি বিজড়িত সিস্টার নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয় আজও তার স্মৃতি আলোচিত।

বাগবাজার অঞ্চলে তার মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তার স্মৃতিতে উদ্যান এর নামকরণ হয়েছে কিন্তু তার আদর্শকে আমরা কতটা নিজেদের জীবনে গ্রহণ করতে পেরেছি তার মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। তার জীবন ও বাণী যদি আমরা অন্তর দিয়ে অনুসরণ করতে পারি তবেই আমরা পৃথিবীর মানুষকে আমাদের আপনজন বলে মেনে নিতে পারবো।

আরো পড়ুন – ছাত্রসমাজের কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

আরো পড়ুন – মানবজীবনে পরিবেশের গুরুত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *