গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করার জন্য ভারতের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। এতে বলা হয় যে আগামী দিনে বহুমুখী খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে 51% একমুখী খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে 100% এবং সামাজিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে 49% বিদেশি কোম্পানিকে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে এবং তাদের ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।
কিন্তু সরকারি ঘোষণার পর থেকেই সরকার বিরোধী দলগুলি প্রায় সকলেই এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে এবং তার প্রভাবে জনজীবনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
এফ ডি আই কি? (What is FDI)
কোন দেশে যখন বিদেশে কোন কোম্পানি সরাসরি পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করে উৎপাদন ব্যবসা উৎকর্ষ আনে, উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং সেই উৎপাদিত পণ্য সেই দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিক্রয় করে তখন সে ব্যবস্থাকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বলে।
বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো যে দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয় সেখানকার অর্থনৈতিক দিক থেকে দুর্বল কোম্পানিগুলো তাদের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে। এতে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানি বেশি মুনাফা লাভ করে। আবার কোথাও বা বিনিয়োগকারী কোম্পানীগুলির নিজেরাই নতুন নতুন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে এবং সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা দেশের সরকারের সাথে বিদেশি কোম্পানিগুলো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে।
বিদেশী বিনিয়োগে সরকারি উদ্যোগ
হাজার 990 সালে ভারত সরকার প্রথম খোলা অর্থনীতি গ্রহণ করে এবং তখন থেকে কিছু কিছু বিদেশি বিনিয়োগ দেখা গেছে। অর্থাৎ অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ আহবান করছেন এবং তাকে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা করে দিয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার FDI সমর্থন বলেছেন –
(ক) বিদেশি বিনিয়োগ একদিকে ভোগকারী সুবিধা পাবে এবং অন্য দিকে চাষীরাও তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভালো দাম পাবে।
(খ) বর্তমানে সবজি ও ফলের পরিবহনে ৪০% নষ্ট হয়ে যায় তা আর হবেনা।
(গ) বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিদেশি বিনিয়োগ হলে এক্ষেত্রে একচেটিয়া বাজারের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে এবং তাদের ভোক্তারা উপকৃত হবেন।
বিদেশী বিনিয়োগের বিরোধিতার কারণ
যারা FDI এর বিরোধিতা করছেন তারা যে যুক্তিগুলো দেখাচ্ছেন তা হল –
(ক) বহুমুখী ক্ষুদ্র কারবারের সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিচ্ছে বিদেশি রাষ্ট্র এবং বহুজাতিক সংস্থা গুলি চাপের কারণে।
(খ) উড়ান ব্যবসায়ী এটা ঘটলেই ব্যবসায়ী যেসব শিল্পগুলি আর্থিক সংকটে আছে তাদের সুবিধা করে দেওয়া।
(গ) একমুখী বাণিজ্য ১০০% বিদেশি বিনিয়োগ ঘটলে তা দেশীয় ক্ষুদ্র শিল্প গুলি কে আঘাত করবে।
(ঘ) ৫১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ দীর্ঘকালীন প্রেক্ষিতে চাষী ও ভোগ কারীদের স্বার্থে আঘাত হানবে। অর্থাৎ বিরোধীদের বক্তব্য হল কেন্দ্রীয় সরকার বিদেশি বিনিয়োগের সুফল যায় দেখান না কেন তা দীর্ঘমেয়াদি ভারতীয় অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকারক হবে কারণ এতে বহুজাতিক সংস্থা গুলি ভারতীয় শিল্প হত্যা করে তাদের রাজত্ব কায়েম করবে।
ভারতের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রভাব
যে কোন নীতির যেমন ভালো-মন্দ দুইটা দিক থাকে তেমনি প্রত্যেক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দুটি দিক আছে। ভালো দিক দেখলে বলা যেতে পারে যে এতে বিদেশি অর্থ বিনিয়োগ এর ফলে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে এবং তার সাথে পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনের উন্নতি ঘটবে।
আবার বিপরীত দিক থেকে মনে করা যেতে পারে এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একটু বেশি দামে দেশে উৎপাদনকারীদের থেকে পণ্য কিনলে বাজার দখল করার পর তারা চাষীদের দাম আরও কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া কম পুজির ব্যবসা বিদেশিদের চাপে বাজার থেকে সরে যেতে বাধ্য হবে ফলে জাতীয় অর্থনীতি হারাবে।
উপসংহার – অর্থনীতির যুগে কোন দেশের পক্ষে বিদেশি বিনিয়োগে সম্পূর্ণ করা খুবই কঠিন কারণ বর্তমান পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অর্থনীতিতে পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই বাণিজ্যিক সম্ভবত ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বেশি দিন আর আটকে রাখা যাবে না।