দেশ ও জাতির জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যেগুলো আমাদের নতুনভাবে উজ্জীবিত করে। অনুপ্রাণিত করে নতুন অঙ্গীকারে। আমাদের অনেক ভুল বোঝাবুঝির সেদিন অবসান ঘটে। অনেক অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের মধ্যে দিয়ে সেদিন আমাদের অন্তরের শুদ্ধিকরণ।
সেদিন মানুষ গড়ার কারিগরদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন। ৫ই সেপ্টেম্বর এরকমই একটি দিন। দিনটি শিক্ষক দিবসরুপে সমগ্র জাতির কাছে স্মরণীয়।ভারতের এক অন্যতম সাক, মহান শিক্ষক, ভারত-রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণের জন্ম দিনটি জাতির উদ্দেশ্য উত্সর্গকৃত হল। দিনটি চিন্হিত হল ‘শিক্ষক দিবস রূপে’।
সূচী তালিকা
শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য
দিনটি শুধু শিক্ষকদের কাছেই গভীর তাৎপর্যভরা তা নয়। দিনটি ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনসাধরণের কাছেই গভীর অর্থ বাহক। শিক্ষক জাতির মেরুদন্ড। তাঁরাই শিক্ষার্থীর মনের অন্ধকার দূর করেন।জ্বালিয়ে দেন জ্ঞানের প্রদীপ।
শিক্ষকরাই দেশ ও জাতির অগ্রগতির যুগে যুগে নানাভাবে অবহেলিত হয়েছেন। দারিদ্র্য হয়েছে তাঁদের নিত্যসঙ্গী। শিক্ষকদের জন্য চাই আর্থিক নিরাপত্তা। যাঁদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ, তাঁরা অবহেলিত থাকলে তার অপরাধ ক্ষমারও অযোগ্য। শিক্ষখ দিবসের তাৎপর্য তাই গভীর ও ব্যাপক।
শিক্ষক দিবস ও সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ
১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ শহর থেকে এক চল্লিশ মাইল উত্তর-পশ্চিমে তিরুতানি গ্রাম। মধ্যবিত্ত ব্রাহ্মন পরিবারে জন্ম নিলেন এক স্মরণীয় জ্ঞান-ভিক্ষু। নাম তাঁর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ। পিতা বীরস্বামী পুরোহিত ও শিক্ষক। রাধাকৃষ্ণ ১৯০৫ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম.এ করেন। ১৯০৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।
১৯১৮ সালে মহিশুরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। এর আগেই তাঁর ‘দ্য ফিলজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ গ্রন্থের প্রকাশ।১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হন। কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে তিনি কেমব্রিজ অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অফ দ্য ইউনিভার্সিটি অফ দ্য ব্রিটিশ এমপবের’ এ যোগদান করেন।
এভাবেই স্বদেশে বিদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নানাভাবে যুগক থেকেছেন রাধাকৃষ্ণ। তারপর প্রথমে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি, পরে ১৯৬২ তে তিনি ভারতে রাষ্ট্রপতি হন। একজন শিক্ষক হলেন দেশের অন্যতম প্রধান কর্ণধার। স্বাধীন ভারতের প্রথম তিনজন ‘ভারত রত্ন’ এক জন তিনি। তাঁর বড় পরিচয় তিনি একজন আদর্শবান শিক্ষক।জ্ঞান-তপস্বী। তারপর রাষ্ট্রপ্রধান। তাই তাঁর জন্মদিনটি শিক্ষক দিবসে রূপে চিন্হিত হল।
শিক্ষক দিবসের কর্মসূচি
এ দিনটিতে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণ-এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এই পবিত্র দিনে শিক্ষকরাই যে জাতির মেরুদন্ড তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। এ দিনেই ভারতের কৃতি শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানে পুরস্কৃত করা হয় বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দিনটি নানা দিক থেকেই তাত্পর্য মন্ডিত হয়ে ওঠে। গভীর মর্জাদাসহকারে দিনটিকে উদযাপন করা হয়। বর্তমান সমাজ জীবনে দিনটির গুরুত্ব কম নয়। এ দিনটির সঙ্গে এমন একজন মানুষের নাম যুক্ত হয়ে আছে, যিনি সমগ্র শিক্ষক সমাজের গর্ব। এ দিনে তাঁকে স্মরণ করে আমরা ধন্য হয়। নিজেদের নতুন করে উপলব্ধি করি।
শিক্ষকতা নিছক পেশা বা জীবিকাই নয়। অন্য পেশার সঙ্গে এর মৌল পার্থক্য রয়েছে। শিক্ষক শুধু শিক্ষাই দেন না। তিনি শিক্ষার্থীরা মনে অনুপ্রেরনা সঞ্চার করেন। চিত্তের প্রসার ঘটান। শিক্ষার্থীর কমল মনে তিনি গভীর প্রভাব বিস্তার করেন। সেই শিক্ষকরাই আবার দরিদ্রের শিকার হয়েছেন।অর্থনৈতিক মর্যাদা অর্জন না করলে সামাজিক মর্যাদা আসে না।
অথচ সমাজ বহুদিন সেই মর্যদা থেকে তাঁদের বঞ্চিত করেছে। তবু জাতির শুভবুদ্ধি জাগ্রত হয়নি।মনে রাখতে হবে। তাঁরাও সমাজের এক প্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য অঙ্গ। সাধারণ মানুষ শিক্ষক সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাবান হোক। এটাই শিক্ষকদিবসের প্রানের কথা।