“মহা সমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে
পারি তো যে সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুদের মত চুপ করিয়া থাকিত তবে সেই
নিরব মহা শব্দের সহিত এই লাইব্রেরী তুলনা হইত”। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শিক্ষা বিস্তারে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অসাধারণ গ্রন্থাগার হলো মানবের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন। স্কুল-কলেজে মানুষ সীমিত জ্ঞান লাভ করে কিন্তু গ্রন্থাগারে মানুষ জ্ঞান লাভ করে নানা বিষয় গ্রন্থাকারে মানুষ জ্ঞান লাভ করে নানা বিষয়ে গ্রন্থাগার হলো সকল মানুষের স্নেহ সাধনার পীঠস্থান কিন্তু ছাত্রদের কাছে গ্রন্থাগার সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানপীঠ।
গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা
গ্রন্থাগার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ মিলনের অক্ষর নির্মিত সেতুর নদীর স্রোতের মতো প্রবাহ দেশ-দেশান্তরে যুগ-যুগান্তরে মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এক হৃদয়ের ভাবরাশি নিঃশব্দে সঞ্চারিত হয়ে যায় হৃদয়ান্তরে, গ্রন্থাগারে তাই জানিয়েছেন এ লক্ষ-কোটি মানুষের নির্ভর আন্দোলনের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
এখানে চিন্তাবিদ পায় তার নানামুখী চিন্তার খোরাক এবং নানা দুরূহ জিজ্ঞাসার উত্তর ভাবুক অনুসন্ধান। হৃদয়ের ক্ষুন্নিবৃত্তির এমন বিপুল আয়োজন আর কোথাও আছে? গ্রন্থাগার তাই ভাব তৃষিত জ্ঞানপিপাসু সহস্র তৃপ্তি সরোবর। অমৃত সরোবর। অনন্ত অফুরন্ত বিভিন্নভাবে চিন্তার বিষয় রচিত হয়েছে গত গ্রন্থসম্ভার কোন একজন ব্যক্তির পক্ষে সেইসব গ্রন্থ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
গ্রন্থাগার বহু মানুষের যৌথ প্রতিষ্ঠান। সেখানে বহু গ্রন্থ পাঠের সুযোগ মেলে। তাছাড়া গ্রন্থাগার থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা সহ-সভাপতি মত যে কোন বিষয়ক গ্রন্থ সংগ্রহ করে পাঠ করতে পারে।
গ্রন্থাগারের দায়িত্ব
আধুনিক যুগে লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগারের দায়িত্ব গভীর ও ব্যাপক। প্রধানত তিনটি দিক দিয়ে গ্রন্থাগার তার দায়িত্ব পালন করতে পারে – গ্রন্থ সংগ্রহ, সংগৃহীত গ্রন্থকার ঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে সংগৃহীত ও রক্ষিত গ্রন্থ গুলোকে কাজে লাগানো। সুষ্ঠুভাবে গ্রন্থসংগ্রহ একটি অতি দ্রুত কাজ।
প্রতিদিন দেশ-বিদেশে হাজার হাজার নতুন গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। গ্রন্থাগারের সংহতি ও প্রয়োজনে দিকে লক্ষ্য রেখে উৎকৃষ্ট গ্রন্থকে সংগ্রহের জন্য নির্বাচন করা উচিত। আবার গ্রন্থগুলো যাতে সযত্নে রক্ষিত হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। নানাবিধ পোকার উপদ্রব। প্রাকৃতিক বাধা-বিপত্তি এবং অসৎ পাঠক ও গ্রন্থাগার কর্মীদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বহু সময় বহু উৎকৃষ্ট গ্রন্থ নষ্ট হয়। গ্রন্থাগার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কথা স্মরণ রাখা উচিত।
এছাড়া রক্ষিত বন্ধুগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো গ্রন্থাগারের এক পবিত্র কর্তব্য। এজন্য চাই উপযুক্ত সংগঠন চাই এমন ব্যবস্থা যেতে আগ্রহী ব্যক্তিরা বিভিন্ন গ্রন্থে প্রয়োজন মত ব্যাবহার করতে পারে।
ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গ্রন্থাগারের মূল্য
ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গ্রন্থাগার এর মূল্য অপরিসীম গ্রন্থাগার থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি বারে। স্কুল জীবন থেকে কলেজ জীবন থাকার প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। কলেজ জীবনে যেমন তাদের জ্ঞানের সীমা রেখা বাড়তে থাকে তেমনি সেখানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়ানো হয়।
সুতরাং যে কোন ভালো জ্ঞান লাভ করতে হলে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক এর উপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না তার জন্য চাই। সেই সহায়ক পুস্তক যোগান দিতে পারে একমাত্র গ্রন্থাগার। গল্প-উপন্যাস ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই পড়বে।
তবে এমন গল্প-উপন্যাস পড়বে যার দ্বারা মনের প্রসার ঘটে। উন্নত জীবন বোধ জাগ্রত হয় সে সকল গ্রন্থাগারে।
উপসংহার: গ্রন্থাগার লোক শিক্ষা প্রসারে প্রভুত সাহায্য করে। গ্রন্থাগার গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। ভারতের মতো শিক্ষায় অনগ্রসর দেশ গ্রন্থাগার লোক শিক্ষা প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধনের জন্য শিশু গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। ছাত্র ছাত্রীরা জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রতি আকৃষ্ট হয়।
সে জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও কর্মসূচি প্রয়োজন। জাতীয় সরকারের গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে যথেষ্ট উদ্যোগী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত গ্রন্থাগার গুলোর জন্য অনেক গ্রন্থ কিনে থাকেন। গ্রন্থাগার হলে জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ থাকা উত্তম গ্রন্থাবলী সংরক্ষিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে উত্তম পরিচালনায় একটি রাজ্য পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন – প্রতিবন্ধী সমস্যা
আরও পড়ুন – ভারতের বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ
1 thought on “শিক্ষা বিস্তারে গ্রন্থাগারের ভূমিকা”