হেলিকপ্টার বিপর্যয় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরি সন্দিতি রাজশেখর রেড্ডি

ভূমিকা:  ভারতের মহাকাশে ও বিমান বা হেলিকপ্টার বিপর্যয় কোন নতুন ঘটনা নয়, কিন্তু ২০০৯- এর 3 সেপ্টেম্বর যে হেলিকপ্টারটি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে নিয়ে চিত্তুর যাওয়ার পথে যেভাবে নিখোঁজ হয়ে গেল তা সত্যিই একসাথে বিস্ময় ও উদ্বেগের সৃষ্টি করে।  কারণ মুখ্যমন্ত্রীর জন্য কিছুদিন আগেই বেশকিছু অর্থব্যয় কেনা হয়েছিল নতুন একটি হেলিকপ্টার,  যার নাম আগস্ট এ ডাবলু ১৩৯।  তাসত্ত্বেও  ওয়াই এস রেড্ডি পুরনো হেলিকপ্টারে চড়ে চিত্তুর যাচ্ছিলেন যেটির যান্ত্রিক ত্রুটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত।

হেলিকপ্টার বিপর্যয় অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরি সন্দিতি রাজশেখর রেড্ডি

 দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া:  হেলিকপ্টারটি সকাল 8:35 আকাশে ওড়ার পর 9:12 শেষ বার্তা পাঠান। 9:35 নাগাদ হেলিকপ্টারটি সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।  হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার প্রধান কারণ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া।  আকাশ ছিল ঘন মেঘে ভর্তি, এক্ষেত্রে পাইলটের অদক্ষতার প্রশ্ন ওঠেনা,  কারণ এখানে যে পাইলট ছিলেন তিনি নতুন বা নবিশ নন।  দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সাথে হেলিকপ্টার যান্ত্রিক ত্রুটি ও অস্বীকার করা যায় না।  ভারতের বিমান বিপর্যয়ের ইতিহাসে ইতিমধ্যেই অনেক মন্ত্রী আমলা প্রাণ হারিয়েছেন।

১. ১৯৮০  সঞ্জয় গান্ধীর বিমান ওড়ানোর সময় ভেঙে পড়ে।

২. ২০০১  সালে মাধবরাও সিন্ধিয়া সেসনা সি-৯০  বিমান ভেঙে পড়ে,  উত্তরপ্রদেশে মোটা গ্রামের কাছে।

৩. ২০০২  সালে অন্ধ্রপ্রদেশে কাইকালুরি হেলিকপ্টার ভেঙে মৃত্যু হয় লোকসভার স্পিকারের।

৪. ২ সেপ্টেম্বর ২০০৯  দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কুর্ণলের এর কাছে নিখোঁজ হয়ে যায় অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বেল-৪৩০  হেলিকপ্টারটি।

 দয়ালু মানুষ:  অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই.এস .রেড্ডির  চটজলদি হেলিকপ্টার সফর দিয়েই বোঝা যায় তিনি একজন মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন।  তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের কাডাপ্পা জেলার পুলিভেন্দুলা নগরে ১৯৪৯  সালের ৮  জুলাই জন্মগ্রহণ করেন।  গুলবর্গা বিশ্ববিদ্যালয় ডাক্তারি পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি।  পরে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতেই চলে আসেন।  তবে সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু তিনি ডাক্তার রূপে পরিচিত ছিলেন।

সুদক্ষ রাজ্য রাজনৈতিক: রাজ্য রাজনীতিতে তার প্রধান প্রতিপক্ষ চন্দ্র বাবু নাইডুর সঙ্গে একই বছর তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসেন।   পরে এই রাজশেখরের সঙ্গে তার অহিনকুল সম্পর্ক তৈরি হয় । তাঁর বিরুধ্যে প্রচুর দুর্নাম বিরোধীপক্ষের ছড়ালেও তিনি কিন্তু নিজেকে দক্ষ, স্পষ্টবক্তা এবং খোলামেলা রাজনীতিক হিসেবে তাঁর সুনাম অবশ্য আগেই ছড়িয়ে পড়ে,  যেমন আনজা মন্ত্রিসভায় গ্রাম উন্নয়ন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দপ্তরের নিয়ে কল্যাণমূলক কাজে হাত পাকিয়ে ছিলেন আমিতো তা নিরবিচ্ছিন্ন থাকে।  খরা-অনাবৃষ্টি কবলিত অন্ধ্রের কৃষকদের জন্য সেচের জল আনতে অনশন,  পদযাত্রা,  কি করেন নি তিনি তবে তার ঐতিহাসিক ১৪০০  কিলোমিটার পথ যাত্রী তাকে গ্রাম গঞ্জের সাধারণ মানুষের একেবারে কাছে নিয়ে আসে।  তার পাঁচ বছরের মুখ্যমন্ত্রী গ্রাম উন্নয়ন ও জনকল্যাণ কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি আরো বাড়িয়ে দেন। সেই জন্যই তিনি আচমকা গ্রামেগঞ্জে পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়তে সাধারণ মানুষের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য।

 উন্নত জনসংযোগ :  খুব উন্নতমানের জনসংযোগে একজন মন্ত্রী বা বিধায়কের সাফল্যের কারণ তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন,  তাই নিজের চোখে উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণ দেখবেন বলে স্থির করেছিলেন।  তাই দুর্যোগের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এবং শুভার্থীদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই বেরিয়ে পড়েছিলেন গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে যৌন সংযোগ রক্ষা করতে তাদের সুখ-দুঃখ নিজের চোখে দেখতে হেলিকপ্টার মুহূর্তে তিনি বুঝতে পারেনি যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌছাবার এটাই তার শেষ সফর।  এরকম একজন জন্গন্হিত্কারী অ-সাধারণ  মুখ্যমন্ত্রী অন্ধ্রপ্রদেশ আবার পাবে কি না সেটে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।