বাংলার কৃতি সন্তান, ‘বাংলার বাঘ’ নামে পরিচিত কলকাতার ভবানীপুরের মুখুজ্যে পরিবারের সন্তান স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর সুযোগ্য সন্তান ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সুযোগ্য সন্তানশুধু কৃতি বং সন্তানই নন, তাঁর খ্যাতি, কার্যাবলী ভারতবর্ষের ভৌগোলিক সীমা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছিল।
মানবতাবাদী, সুপন্ডিত, শিক্ষাবিদ ও দক্ষ সংসদ বক্তা রূপে তিনি আজও সকলের মনের বিরাজমান থাকবেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
১৯০১ খ্রিস্টাব্দের 6 জুলাই কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলের শ্যামাপ্রসাদ এর জন্ম। পিতা বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। মাতা যোগমায়া দেবী। ভবানীপুর মেট্রিক পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে বি.এ পাস করেন।
১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ পাস করেন। এরপর বি.এল পরীক্ষায় প্রথম হলেন। এরপর বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পাস করে দেশে ফিরে এলেন।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন। এখান থেকে তার সংসদীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কর্মজীবন
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়। মাত্র 24 বছর বয়সে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফেলো’ নির্বাচিত হন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে 30 বছর বয়সে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। তারপর আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্ষদের সদস্য এবং চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন।১৯৩৮ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হয়। ওই সমই বারানসী বিশ্ববিদ্যালয় এল.এল.ডি উপাধি প্রদান করে।
এরপর শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। তিনি হিন্দু মহাসভা যোগ দেন এবং এর সভাপতি হন। এরপর তিনি ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। কিন্তু মেদিনীপুরে বিপ্লবীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
এরপর হাজার ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য, সেবা, চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ হাজির হলেন অসহায় মানুষের পাশে। এই কাজে নিযুক্ত হিন্দু মহাসভা এবং মাড়োয়ারি সোসাইটির মধ্যে তিনি একটি সভাপতি এবং অন্যটি সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি জহরলাল নেহেরুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শিল্প ও সরবরাহ যোগদান করেন।
কিন্তু জহরলাল সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় কিছুদিন বাদে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু মহাসভার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ জনসংখ্যা নামে একটি নতুন দল গঠন করেন এবং পরে ওই দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।
এই সময় থেকে ভারতীয় পার্লামেন্টের বিরোধী নেতা হিসেবে অসাধারণ পরিচয় দেন। তিনি বাংলা তথা ভারতে নানা সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসেন। ভারত সরকারের নীতির প্রতিবাদে কাশ্মীরে প্রবেশ করে সেখানকার সরকারের হাতে বন্দী হন। বন্দী অবস্থায় সেখানে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ভারত বিভাগের শ্যমাপ্রসাদের প্রতিবাদ
তিনি ছিলেন যথার্থ দেশ প্রেমিক। তিনি বাংলাকে প্রানের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগের প্রস্তাব করলে সম্প্রচার তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ভারত ভাগ করলে বাংলার সর্বনাশ হবে। তিনি ভারত বিভাগের প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দিবস পালন।
বলিষ্ঠ প্রচেষ্টায় পশ্চিমবঙ্গ পাকিস্তানের কবল থেকে রক্ষা পায়। সমগ্র বাংলাকে রক্ষা না করতে পারার ব্যর্থতার মনে গভীর বেদনা ছিল। কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল পূর্ববাংলার পাকিস্তানকে সমর্থন করায় তিনি তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু তার কথা কেউ নয় তিনি ক্ষুব্ধ বেদনাহত হয়েছিলেন। পূর্ব বাংলার মানুষের আসন্ন দুর্নীতি সম্পর্কে সতর্ক বার্তা জানিয়ে ছিলেন।
উপসংহার: অসামান্য সাহস, বিচক্ষণতা ও তেজস্ক্রিয়তায় তিনি বাঙালির মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন। জন্মশতবার্ষিকীতে বাঙালি তাকে নতুন করে শ্রদ্ধায় বরণ করে আসছে। তার স্মরণে কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য স্থানে অনুষ্ঠান হয়েছে।
কিছু কিছু পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। তার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন সার্থকভাবে তার আদর্শ রূপায়নে। ছাত্র সংগঠন, অসাধারণ বাগ্মী ও দেশের মানুষের ডঃ শ্যামাপ্রসাদ ছাড়া ভারতের সম্মানিত। ভারতবর্ষের মনে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।