মানব সভ্যতার গোড়া থেকে শুরু হয়েছে যুদ্ধ।আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত কত যে যুদ্ধ হয়েছে নানা দেশের মধ্যে তার কোনো হিসাব নেই। প্রাচীনকালের যুদ্ধ হতো সামনাসামনি। কিন্তু আধুনিককালে যুদ্ধ হয় দূর থেকে দূরপাল্লার গোলাগুলির সাহায্যে।
এ যুগে অন্তর্দেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে এক দেশ থেকে অন্য দেশকে ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাইরে যুদ্ধে অনেকটা কমে গেলেও বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ‘ঠান্ডা যুদ্ধে’ যাকে বলা হয় ইংরেজিতে ‘Cold War’।
মানব মনে যুদ্ধের প্রবণতা
যাযাবর মানুষের পশুচারণ ক্ষেত্রে দখল নিয়ে পৃথিবীতে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল মানুষের হাতে মানুষের যে রক্ত ঝরেছিল তা নানা কারণে, নানা অজুহাতে, নানা রূপে, নানা ভঙ্গিমায় আজও পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।এক গোষ্ঠীর মানুষ অন্য গোষ্ঠীর মানুষকে আক্রমণ করে পরাজিত গোষ্ঠীর সম্পত্তি দখল করেছে।
পরবর্তীকালে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভব ঘটেছে। রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে ও রাজা নির্বাচিত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে চলেছে যুদ্ধবিগ্রহের পরিমাণ। রাজা তার রাজ্যের সীমানা বৃদ্ধির জন্য নানা ছলে কখনো জাতির অহংকার কখনো ধর্মের নামে কখনো সভ্যতার আলো জ্বালান নামে এমনকি ন্যায় প্রতিষ্ঠার নামে যুদ্ধ বাধিয়েছে।
আধুনিক যুদ্ধের রূপ
আধুনিক যুগের ঠান্ডা যুদ্ধের রূপ বড় ভয়ঙ্কর। বিশ্বের শক্তিশালী দেশ গুলি অতি ভয়ঙ্কর আণবিক বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা রেখেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ছোট একটি আণবিক বোমা ফেলেছিল।
তার ফলে ওই দুটি সমুদ্র বন্দর শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। মারা যায় হাজার হাজার নরনারী। বিকলাঙ্গ হয়ে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ। সেই ছোট আণবিক বোমার তুলনায় কত গুণ শক্তিশালী আণবিক বোমা আজ মজুত রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেনের হাতে। এরা ছাড়া আরো বহু দেশ মারাত্মক অস্ত্র মজুত রেখেছে।
এখন শুধু আকাশপথের যুদ্ধ নয় নক্ষত্রপথ যুদ্ধের আয়োজন করে রাখা হয়েছে যার নাম ‘Star War’। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রপ বেশি অস্ত্র জমা পড়েছে যা দিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ব ধ্বংস সম্ভব।
যুদ্ধ বিশারদ এর মতে এক আমেরিকা হাতে এত বেশি উন্নত মানের অস্ত্র আছে যা দিয়ে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করা যেতে পারে।
যুদ্ধের ভয়াবহতা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছেছে। শিখেছে বিভিন্ন ধাতুর ব্যবহার। অসুস্থ মানুষকে যুদ্ধ করার সহজ পথ যেমন যায় তেমনি যুদ্ধের বীভৎসতা আরো বাড়িয়েছে।
যে যুদ্ধ ছিল গোষ্ঠীতে রাজায় রাজায় ক্রমে তার ব্যাপ্তি বাড়তে লাগলো। শুরু হলো পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা মানুষকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ যেমন দিয়েছে। তেমনি জীবনের অনিশ্চয়তা ও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভয়াবহ পরিণতি সমগ্র বিশ্বকে শিহরিত করেছিল। কিন্তু তারপরও যুদ্ধের প্রস্তুতি অব্যাহত আছে।
বিশ্ববাসী আরো একটি ভয়ানক বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র ধ্বংস করেছে হিরোশিমা নাগাসাকি কে। প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা যুদ্ধে প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ মানুষ ধ্বংস হয় মানুষের বহু সাধনার সৃষ্টি। ভেঙে যায় মানুষের সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
প্রার্থিত শান্তির কারণ
পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ যুদ্ধ চাইনা। তারা সুখে স্বাচ্ছন্দে বাঁচতে চাই, শান্তি কামনা করে। শান্তির মধ্যে জীবনে নির্ভরতা খুঁজে পায় তারা। বিশ্বাস ও আনন্দকে আবিস্কার করে। পারিবারিক জীবনের স্মৃতি আত্মীয়-পরিজন ভালোবাসা গার্হস্থ্য পরিবেশে সুখ-শান্তি একান্ত ভাবে তাদের প্রার্থীত।
শান্তির মা জীবিত হতে দেখলে সাধারণ মানুষের সভাপতি প্রার্থী দের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দুশ্চিন্তা অনুভব করে।
উপসংহার: আদিকাল থেকে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছে তা যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হতে হবে। কোটি কোটি কন্ঠে গর্জন তুলতে হবে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। এই গর্জন শুনলে যুদ্ধবাজদের মনে ভয় ঢুকে যাবে। তারাও আর যুদ্ধ করতে চাইবে না।
বিশ্ব সভ্যতা কে বাঁচাবার জন্য বিশ্বের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত ছোট বড় যুদ্ধ হয়েছে দুইশোটি। আর তার ফলে মৃত্যু হয়েছে আড়াই কোটি মানুষের।
বিকলাঙ্গ হয়েছে কোটি কোটি মানুষ। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি অবর্ণনীয়। তাই আজ বিশ্বের সকল মানুষকে যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হতে হবে।