বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন তখন আগুনের মতো দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। শুধু অহিংস অসহযোগ আন্দোলন নয়, সশস্ত্র সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছে। সেই সময় সবার মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল একটি নাম মাস্টারদা। কিন্তু অনেকেই তাকে চেনেন না। কে এই মাস্টারদা? তিনি হলেন বিপ্লবী সংগঠক সূর্যসেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দলের নেতা সূর্যসেন।
মাস্টারদা সূর্যসেনের জন্ম ও শিক্ষা
এই বিপ্লবী মহানায়ক এর জন্ম হয় চট্টগ্রাম জেলার নয়াপাড়া গ্রামের ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর। তার পিতার নাম রমনীরঞ্জন সেন। তার শিক্ষা শুরু গ্রামের স্কুলে। চট্টগ্রাম থেকে তিনি আইএ পাস করেন। আর বিএ পাস করেন বহরম কলেজ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে।
মাস্টারদা সূর্যসেনের কর্মজীবন ও কৃতিত্ব
মাস্টারদার কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাই স্কুল অংকের শিক্ষক। শিক্ষক হিসাবে তিনি ছিলেন অতি প্রিয়।সবার কাছে তিনি মাস্টারদা নামে পরিচিত। তার জীবন ব্রত ছিল কোন ভাবে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা। তাই তিনি স্থানীয় যুবকদের নিয়ে একটি দল গড়ে তোলেন সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য কিন্তু এর জন্য অর্থের প্রয়োজন।
অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৩ ডিসেম্বর রেল কোম্পানির একটি গাড়ি থেকে অর্থ লুট করেন। উদ্দেশ্য সফল হওয়ার তিনি আরও বড় উদ্দেশ্য স্কুলের ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি নামে একটি দল। তারা পরিকল্পনা করেন মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগার লুন্ঠনের।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে এপ্রিল রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটে একই সঙ্গে সরকারি অস্ত্রাগার লুট করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সূর্যসেনের নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি সরকার গঠিত হতো। সূর্যসেন সমস্ত বিপ্লবীদের ধরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। বিপ্লবীরা আত্মগোপন করে। ইংরেজরা সূর্যসেনের মাথার দাম ঘোষণা করে ১০ হাজার টাকা।
মাস্টারদা সূর্যসেনের মৃত্যু
শেষ পর্যন্ত ১৯৩৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্বাসঘাতক গ্রামবাসী সূর্যসেনকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। বিচারে মাস্টারদার ফাঁসির হুকুম হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জানুয়ারি রাত ১২:৪০ এ চট্টগ্রাম জেলে বাংলা তথা ভারতের এই অসম সাহসী বিপ্লবীর ফাঁসি হয়। গন্ডগোল এড়াতে অন্ধকারে গোপনে তার মরদেহ ইংরেজ সরকার জাহাজ করে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রের মাঝখানে ফেলে দেয়।
বিপ্লবীদের সূর্যসেন চিরবিদায় নিলেন মাস্টারদা আছে কিন্তু ভারতবর্ষের অন্তরে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে উজ্জ্বল হয়েছে।