পৃথিবীর মানুষের মঙ্গল গ্রহ অভিযানের ইচ্ছা বহুদিনের। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ মঙ্গলগ্রহের সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মঙ্গল জয়ের সাধনার প্রথম বাস্তবায়ন ঘটেছিল ১৯৭৬ সালে যখন ‘ভাইকিং’ নামের মহাকাশযানটি মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করেছিল। তবে সেই অভিযান সফল হয়নি বলে আবার শুরু হয়েছিল পথ চলা। আর তার ফলে গত ২৫ মে, ২০০৮ এ মঙ্গল গ্রহের মাটিকে চুম্বন করল নাসা দ্বিতীয় মহাকাশযান ‘ফিনিক্স’। মঙ্গলে ফিনিক্স অবতরণ অবশ্যই নাসার বিজ্ঞানীদের এক বড় সাফল্য।
ফিনিক্সের যাত্রাপথ
পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দিকে যাবার সময় ‘ফিনিক্স’ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯৩০০ কিমি.। আর এই গতিতে ছুটে মঙ্গলে পৌঁছতে ফিনিক্সের সময় লেগেছে দশ মাস এই সময় মহাকাশযানটি অতিক্রম করেছে ৭১১ লক্ষ কিমি দূরত্ব। অবতরণের সময় মহাকাশযানটি প্যারাসুট এর সাহায্যে ঘন্টায় ৮ কিমি গতিতে নেমেছিল। মঙ্গলের ভূমি স্পর্শ করবার আগে মহাকাশযানটিকে তার গতি অনেক কমাতে হয়েছিল কারণ পূর্বের ছুটে আসা গতিতে মাটিতে নামতে গেলে নিশ্চয়ই ভাবে আগুন ধরে যেতে ফিনিক্স। তাই নাসার বিজ্ঞানীদের অনেক সাবধানে অবতরণ করা হয়েছে এই ফিনিক্স কে এবং এ ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে তাদের সাফল্য পেয়েছেন নিরাপদে প্রত্যাশা মতোই ফিনিক্স মঙ্গলের মাটিতে নেমেছে।
ফিনিক্সের কর্মকাণ্ড
মঙ্গলের মাটিতে নামবার ২ ঘণ্টা পর থেকে ফিনিক্সের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রথমে ফেনিক্স তার অবতরণের প্রায় ৫০ টি সাদাকালো ছবি পৃথিবীতে পাঠায়। তার একটি ছবিতে মঙ্গলের পাথরের মাটিতে অবতরণের ছবি পাওয়া গেছে আর অন্যান্য ছবিগুলিতে দেখা গেছে ওই মেরু প্রদেশের মাটি ও বহুভুজ আকৃতির পাথর যার সাথে পৃথিবীর মেরু প্রদেশের পাথরের অনেকটাই মিল দেখতে পাওয়া গেছে। এইসব ছবিতে দেখা গেছে যে মহাকাশযানটির সোলার প্যানেল কাজ শুরু করেছে মঙ্গল গ্রহে উত্তর মেরু অঞ্চলে ব্যাপকভাবে মাটি খোড়া শুরু করেছে মার্স ফিনিক্স ল্যাডার। এর থেকে পাওয়া গেছে লাল ধুলো সাথে মিশে থাকা সাদা পদার্থ। এই সাদা পদার্থ ছবি খুটিয়ে দেখে মার্কিন বিজ্ঞানীরা কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেছে। নাসার বিজ্ঞানীদের মধ্যে যেন সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, সাদা পদার্থটি কি বরফ না লবন? তবে যদি এটা সত্যি হয় তবে এই আবিষ্কারে অত্যন্ত রোমাঞ্চকর হবে কারণ মাটি থেকে জল বাষ্পয়িত হবার সময় লবণ সৃষ্টি হয়। ফিনিক্সের অন্যতম পরিকল্পক বিজ্ঞানী মনে করেন যে ওই সাদা পদার্থটা বরফই । তবে জত্জ্ঞন পর্যন্ত তাকে গলে যেতে বা গ্যাসীয় পদার্থে পরিনত হতে দেখা যাছে ততক্ষণ বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারছেন না ।
ফিনিক্সের কর্মকাণ্ডে বাধা: ২৫ মে ২০১৮- মঙ্গলের মাটিতে অবতরণের পর থেকে ফিনিক্স নামার বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশা মতই কাজ করে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ বাধা আসলো চার জুন। ফিনিক্স তার কাজকর্ম বন্ধ করে বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। খুব স্বাভাবিকভাবে সেটা বিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ালো। এর ফলে তথ্য নমুনা সংগ্রহের কাজ অন্তত একদিন পিছিয়ে গেল যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই ব্যাপারে নাসার এক বিজ্ঞানী জানান যে “মার্স ল্যাদার ফিনিক্স” “মার্স ও-ডি-সি” এদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবার ফলে বিপত্তি ঘটে ছিল। তবে এটা সাময়িক সমস্যা মাত্র। পড়ে অবশ্যই এই সংযোগ বিপর্যয় কাটিয়ে কাটিয়ে উঠে ফিনিক্স আবার মাটিতে পরীক্ষার কাজ শুরু করে। তবে মহাকাশ গবেষণা করে মঙ্গলের মাটি পরীক্ষা করতে গিয়েও আবার কিছুটা সমস্যায় পড়ে যায় কারণ লাল মাটির মধ্যে এক অপ্রত্যাশিত সাদা দ্রব্যে সন্ধান পাওয়া যায়। এরপরে সমস্যা এই সমস্যা কতদূর ফিনিক্স কাটিয়ে উঠে সামনে চলতে পারবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মনে দ্বিধা দেখা দিয়েছে।
উপসংহার: মঙ্গলবার বুকে ৯০ দিনব্যাপী নানা রকম পরীক্ষা করে অনেক কিছু জানবার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করে ফিনিক্সকে পাঠানো হয়েছে। এ খরচের পরিমাণ মোটামুটি ৪২ কোটি ডলার।এই প্রভৃত অর্থ ব্যয় করে আমরা বিশ্বের মানুষ কতটুকু প্রতিদান পাব এই প্রশ্ন আজ শুধু বিজ্ঞানীদের মাথায় নয় আমরা বিশ্ববাসীর মাথাথেই এসেছে? এখন দেখা যাক যায় আগামী দিনে ফিনিক্স আমাদের জন্য কোন বার্তানিয়ে আসে।