বিজ্ঞানের সাধনার মাধ্যমে মানুষ এক অসীম শক্তির উৎস সন্ধান করেছে। ত্রিলোকে তার আধিপত্য। বিজ্ঞান দিয়েই মানুষ প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে জয় করেছে। এক সময়ে পৃথিবীজুড়ে শুরু হয়েছিল বিজ্ঞানের সাধনা যা আজও শেষ হয়নি। ভারতের অতীত ইতিহাসকে গৌরবময় বিজ্ঞান সাধনা। আর সেদিন থেকেই ভারতীয় বিজ্ঞান সাধনায় বাঙালি পেয়েছিল স্বীকৃতি। আর এই বিজ্ঞান সাধনায় প্রথম পথ প্রদর্শন করেছিলেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার। তিনি বিজ্ঞান সাধনায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সাইন্স’। তাই তিনি বিজ্ঞান বিজ্ঞানের প্রচারের জন্য চিরস্মরণীয়।
বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম স্মরণীয় বাঙালি আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। তিনি প্রথম প্রমাণ করেন যে গাছের প্রাণ আছে। আর এই আবিষ্কারে বিজ্ঞান বিজ্ঞানের চমক সৃষ্টি করেছিলেন। বিনা তারে সংবাদ প্রেরণের যে অবদান সেটাও তারি। ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ তার জীবনের মহৎ কীর্তি।
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র, রামেন্দ্রসুন্দর ও মেঘনাথ সাহা
আচার্য জগদীশচন্দ্র পরেই যার নাম স্মরণীয় তিনি হলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তিনি প্রথম মারকিউরাস নাইট্রেট যৌগ আবিষ্কার করেন। তিনি রচনা করেছিলেন ‘ হিন্দু রসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস’। তার অন্যতম কীর্তি ‘ বেঙ্গল কেমিক্যাল’ প্রতিষ্ঠা। কৃতি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন – নীলরতন, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, প্রিয় রঞ্জন রায় প্রমুখ বিজ্ঞানীরা।
আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ও সাহিত্যিক।তার লেখার বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্য সবকিছুরই পরিচয় পাওয়া যায়। এরপর তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয় ছিলেন তিনি হলেন ডক্টর মেঘনাদ সাহা। পদার্থবিজ্ঞানী অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি থার্মাল আয়োনাইজেশন আবিষ্কার করেন। তিনি বাঙালি বিজ্ঞানী মহলে বিজ্ঞান সাধনা কে উৎসাহ দান করেছেন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্স অফ ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি, নেশনাল অ্যাক্যাডেমি অফ সাইন্স প্রতিষ্ঠা করেন।
চিকিৎসা ও পরিসংখ্যান
চিকিৎসা শাস্ত্রে অবদান রেখে গেছেন ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার। এর পরবর্তীকালে বাঙালী চিকিৎসক হলেন – ডাক্তার নীলরতন সরকার, ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় প্রমুখ। ডাক্তার ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের ইনজেকশন আবিষ্কার করেন।
পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের পৃথিবীর বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রশান্ত মহলানবিশ। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট বিশ্বে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ্যা প্রতিষ্ঠান রূপে পরিগণিত হয়।জাতীয় অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ এর ওপর গবেষণা করে নতুন তত্ত্ব আবিস্কার করে। সেই তথ্য ‘বসু পরিসংখ্যান’ নামে পরিচিত।
প্রত্নতত্ত্ব বিজ্ঞানী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সভ্যতার আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন। মনোবিজ্ঞানী গিরীন্দ্রশেখর বসু বিজ্ঞান জগৎ একটি সুপরিচিত নাম। বিজ্ঞানী রাধানাথ শিকদার হিমালয়ের উচ্চতা অংকের সাহায্য মেপেছিলেন।
বর্তমানে অতীতের মতো সার্থক বিজ্ঞানীর চোখে পড়ে না। উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে প্রথম কয়েকটি দর্শক বাঙালির জীবনে বিজ্ঞান সাধনা সফলতা শিখরে পৌঁছে ছিল। বাঙালির বিজ্ঞান সাধনা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।
উপসংহার: বাঙালির বিজ্ঞান এর ক্ষেত্রে বর্তমানে পশ্চাৎপদতা থাকলেও আমাদের এই আশায় থাকবে যে ভবিষ্যতে বাঙালি সার্থকতা লাভ করতে পারবে। বাঙালি বিজ্ঞানী ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তা লাভ করবে।