ভূমিকা: শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক, আজকের শিশুর মধ্যে সুপ্ত আছে আগামী দিনের নেতা, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী। এই শিশুদের জন্য উপযুক্ত আহার, পুষ্টি ও পরিচর্যা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের দেশের নানান রোগের শিকার। অর্থনৈতিক উন্নতির দিক দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে আমরা তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত। এখানে বেশিরভাগ শিশুই জন্ম নেয় অপুষ্টি নিয়ে। জন্মাবার পর দারিদ্র্যের জন্য অনাহার, আলো বাতাশ অন্ধকার পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। ফলে বহু শিশুসহ নরক যন্ত্রণা ভোগ করে এবং ভারতের উপগ্রহ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
পোলিও রোগের পরিচিতি
পোলিও একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে তাদের এই রোগ বেশি আক্রমণ করে। এই রোগের ভাইরাস সাধারণত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মল ও থুথুর মাধ্যমে ছরায়। এই ভাইরাস সাধারণত তিন প্রকার তবে যে কোন ভাইরাসের আক্রমণে মারাত্মক। এই ভাইরাস খাদ্য ও জলের মাধ্যমে আশ্রয় নেয় অন্তরে এবং পরে তা স্নায়ুতন্ত্রের আক্রমণ করে এবং আক্রান্ত অঙ্গের পেশী শুকিয়ে সেই অঙ্গ কে পঙ্গু করে দেয়। শিশুদের শরীর শুষ্ক হয়ে যায় ও বিবর্ণ হয়। পরে চিকিৎসা করেও এই রোগ সারানো যায় না। ভারতবর্ষে এ রোগের প্রকোপ বিশ্বের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যা যথেষ্ট।
পোলিও প্রতিষেধক টিকা
পোলিও রোগের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচবার প্রথম আবিষ্কার করেন আমেরিকার নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু তথ্য বিভাগের বিজ্ঞানী জোনাস শালক। পোলিও রোগের ভাইরাস কে চিহ্নিত করে তিনি তার টিকা আবিষ্কার করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে সেভিং টিকাকরণ প্রক্রিয়াটি উন্নতি করেন। প্রথমে এই টিকা প্রদান করা হয় ইনজেকশনের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে এই পদ্ধতি বদলে পোলিও প্রতিষেধক খাবার ব্যবস্থা চালু হয়। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে শিশুকে পোলিও প্রতিষেধক খাওয়ালে শিশুদের মধ্যে এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেড়ে যায়, পোলিও ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয় না।
পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আহবানে সাড়া দিয়ে পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে ১৪৫টি দেশ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখনো ভারত বর্ষ এই রোগ নির্মূল করতে পারেনি। ভারতে পালস পোলিও টিকাকরণ শুরু ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু দশ বছর কেটে গেল ভারতবর্ষে পোলিও মুক্ত নয়। পশ্চিমবঙ্গে কি ঘটনা ঘটছে। নানা অন্ধ কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অজ্ঞতার কারণে এদেশে পাঁচ বছর বয়সে শিশুকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। কাকতালীয়ভাবে টিকাকরণের পরদিন কিছু শিশুর মৃত্যু ঘটে যায় মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল। অশিক্ষা কুশিক্ষা কিছু ব্যক্তি যে এই ওষুধ খেলে পরবর্তীকালে শিশুদের ক্ষতি হবে। এইসব কারণে ভারতে পশ্চিমবঙ্গে পালস পোলিও টিকাকরণ পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না।
টিকাকরণের বাধার অপসারণ
পালস পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি সফল করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং এই ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে প্রচার মাধ্যম গুলি। বেতার, দূরদর্শন, সংবাদপত্র প্রভৃতির মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালায় তবে এই কর্মসূচিকে সফল করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়। এই নিয়ে কিছু মানুষের মনে যে কুসংস্কার রয়েছে তা দূর করার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব অজ্ঞ মানুষ ভুল ধারণা ও কুসংস্কারের জন্য এই মহৎ উদ্যোগকে প্রত্যাখান করেছে তাদের বোঝাবার দায়িত্ব নিতে হবে ছাত্রসমাজ ও অন্যান্য দায়িত্বশীল মানুষকেও।
উপসংহার: ভোটের পক্ষে ভোট পত্র আদায়ের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা যেমন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ান, সেই রকম ছাত্র ছাত্রীদের নিজ নিজ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে প্রচার অভিযান চালাতে হবে যাতে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুকে পোলিও খাওয়ানো হয়। তবেই আমাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা যাবে। নবজাতকের বাসযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব ছাত্র-ছাত্রীদের নিতে হবে।