ভূমিকা: কলকাতা বইমেলার এবার ছিল ৩৩ তম বর্ষ। অর্থাৎ গত ৩২ বছরে কত মানুষ এসেছেন এই বইমেলায়, তারা যেমন মেলা দেখেছেন তেমনি তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন। কখনো প্রশংসায় আবার কখনোবা সমালোচনায়। তাতেই সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে আমাদের প্রিয় বই মেলা। দিনে দিনে তার আয়তন ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। মানুষের মনে যে নেশাতে ও বই পড়ার প্রবণতা আজও বেঁচে আছে তা আজ প্রমাণিত সত্য। আর সেখানেই হলো এই বইমেলার সার্থকতা। সে এখন বাংলার অন্যতম উৎসব হয়ে উঠেছে।
বইমেলার থিম: ৩৩ তম কলকাতা বইমেলার থিম ছিল স্কটল্যান্ড। এই দেশটির নামের সাথে দুটি জিনিস নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে- যার একটি হলো বিপ্লবী চেতনা, আর অন্যটি হলো গোয়েন্দাদের পীঠস্থান। তাই এবারের থেকে যথেষ্ট আকর্ষণীয় বলা যেতে পারে। এবারের মেলায় প্যাভেলিয়ন এর সামনে খোলা আকাশের নিচে একটি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, আর প্রতি সন্ধ্যায় সেখানে দেখা যেত নাম শিল্পীদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। বইমেলার জন্য লেখা গান “ ওই ডাকছে বই…..” নাড়া দিয়ে যেত মানুষের মন। মেলার শেষ দিনে এই মঞ্চে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন “ স্কটিশ ব্যাগপাইবার ব্যান্ড” তাদের সুর মূর্ছনায় মানুষের মন ভুলে গিয়েছিল মেলা ভাঙ্গার কথা।
বইমেলার ব্যাপ্তি: এবারের বইমেলা শুরু হয়েছিল ২৮ শে জানুয়ারি তারপর সমাপ্তি হয়েছিল ৮ ফেব্রুয়ারি। গতবার মেলা হয়েছিল সল্টলেক স্টেডিয়ামে, তার থেকে অনেক বেশি জনসমাগম হয়েছিল এবারের মিলন মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত বই মেলায়। এবারে ১২ দিনের এই মেলাতে ১৮ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। যোগাযোগব্যবস্থার অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মানুষ বইয়ের আকর্ষনে এসেছেন, ঘুরেছেন এক স্টল থেকে স্টল, দেখেছেন মানুষের মেলা আর মিশে গেছেন জনস্রোতে জলকণা হয় এখানেই তো মেলাতে আসার সার্থকতা।
মেলার প্রাপ্তি: ২০০৯ এর বই মেলায় যে ১৮ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন যাদের ৮০% ছিলেন ক্রেতা। বইমেলা ময়দানের বইমেলার থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও। গতবারের থেকে এই মেলায় বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে। বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের উৎসাহিত করার জন্য এবার কিছু কিছু লেখক ও প্রকাশকদের তরফ থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। যেমন জীবনব্যাপী সাহিত্য সৃষ্টির জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। প্রতিশ্রুতিবান নতুন সাহিত্যিক হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বিনতা রায়চৌধুরী। প্রকাশনা সংস্থা সপ্তর্ষি পুরস্কার পেয়েছেন প্রতিশ্রুতি প্রকাশক হিসেবে। খোলা আকাশের নিচে স্টল হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে রুপা এন্ড কোম্পানি।
উপসংহার: ৩৩ তম বইমেলা উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আর সেই মেলার সমাপ্তি হলো থিম সং এর পর বিগ বেনের ঘন্টা ধোনির মাধ্যমে। কেটে গেল বারোটা ব্যস্ত দিন, অনেকটা হাট বসার মত। তারপর আবার অপেক্ষা ৩৪ তম হাটের আবার কোলাহলে মুখরিত হবে বইমেলা প্রাঙ্গনে।