অরবিন্দ ঘোষ (Aravind Ghosh) ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন মহান প্রতিষ্ঠাতা, সংগীতবিদ, লেখক, দার্শনিক, বিশেষজ্ঞ ও সোদাসী ছাত্র ছাত্রী সম্প্রদায়ের বিচারপতি ছিলেন। প্রথম জীবনে দেশমাতৃকার মুক্তির সাধনায় বিপ্লবী কাজে যুক্ত হন। পরবর্তী জীবনে মানব জাতির কল্যাণে যোগসাধনায় ব্রতী হন। ঋষি অরবিন্দ অর্থাৎ শ্রী অরবিন্দ ঘোষ ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ১৫ আগস্ট হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কৃষ্ণ ধন ঘোষ এবং মায়ের নাম স্বর্ণলতা দেবী। তার বাবা ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক।
অরবিন্দ ঘোষের শিক্ষা
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেও দার্জিলিংয়ের লরেটো কনভেন্ট স্কুলে ভর্তি হন। ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার জন্য কৃষ্ণকে মাত্র 7 বছর বয়সে বিলেতে পাঠান।অরবিন্দ সেখান থেকেই আই. সী. এস হয়ে দেশে ফেরেন এবং ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাইপস বৃত্তি লাভ করেন।
অরবিন্দ ঘোষের কর্মজীবন ও কৃতিত্ব
দেশে তার কর্মজীবন শুরু হয় বরোদায়, বরোদা কলেজে ইংরেজি অধ্যাপক রূপে।এরপর তিনি ফিরে আসেন বাংলায়। তিনি বন্দেমাতরম পত্রিকার সম্পাদনের নেন। শুরু হয় তার রাজনৈতিক কর্মজীবনের। তিনি বিপ্লবী দলে যোগদান করেন। এইসময় কলকাতা মানিকতলা বোমা তৈরীর কারখানা আবিষ্কৃত হয়। অরবিন্দ এর সঙ্গে জড়িত, এই অভিযোগে সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে।
অরবিন্দ ঘোষের জীবন পরিপূর্ণ হয় ১৯০২ সালে, তার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যোগ্যতা প্রদানে পর্যন্ত। তারপর তিনি কালকাতা ছেড়ে বারানগরে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং তার জীবনের বাকি দিনগুলি সাধনা, ধ্যান, দর্শন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান রেখে অতিশয় বিশেষজ্ঞতা উদ্ভাবন করতে ব্রহ্মচর্য এবং অধ্যয়নে মুখ্য গুরুত্ব দেন।
কিন্তু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জোরদার সকালে আদালতে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তিনি ছাড়া পেয়ে যান। এইসময় জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তার ভগবৎ দর্শন হয়। তার মনে আসে পরিবর্তন। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ফরাসি অধিকৃত পন্ডিচেরিতে গিয়ে যোগ সাধন রত হন। বিপ্লবী অরবিন্দ হলেন ঋষি অরবিন্দ। পন্ডিচেরিতে তিনি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এই আশ্রম তিনি বাকি জীবন কাটান।
তিনি দর্শনের অনেক বই লিখেছেন। তারমধ্যে ‘ লাইফ ডিভাইন’ ও ‘ মাদার’ বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। পন্ডিচেরী আশ্রমের নামে এক মহিলাকে ঋষি অরবিন্দ দীক্ষা দেন। এই মহিলা সকলের কাছে ‘শ্রীমা’ পরিচিত। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ নভেম্বর শ্রী অরবিন্দ সাধনায় সিদ্বিলাভ করেন।
অরবিন্দ ঘোষের মৃত্যু ১৯৫০ সালে ৫ই ডিসেম্বর হয়। তিনি তার জীবনে ভারতীয় সংস্কৃতি, ধর্ম, সাধনা, জীবনদর্শন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান দেওয়ার মাধ্যমে মহান অবদান রেখে গেলেন। এই মহান বিপ্লবী ও সাধকের জীবনদীপ নিভে যায়। শ্রী অরবিন্দের আদর্শের মূলকথা – “সাধনার দ্বারাই মানুষ পার্থিব জীবন থেকে দিব্যজীবনে উন্নীত হতে পারে”।
অরবিন্দ ঘোষ শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।